বরিশাল নিউজ
প্রকাশ : ২১ আগষ্ট ২০২৫, ১০:৩৬ পিএম
বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতাল চত্বর থেকে অবৈধ অ্যাম্বুলেন্স পার্কিং বন্ধ করার নোটিশ দিয়েছেন হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. একেএম মশিউল মুনীর ।
এ জন্য হাসপাতাল চত্বর থেকে অবৈধ অ্যাম্বুলেন্স বের করে দিয়ে স্ট্যান্ডের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোনো অ্যাম্বুলেন্স চালক বা মালিক নির্দেশনা উপেক্ষা করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন পরিচালক।
একই সাথে হাসপাতালের সরকারি অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহারের জন্য রোগীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে নোটিশ টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে জরুরি বিভাগে। এ জন্য অ্যাম্বুলেন্স ভাড়ার তালিকা এবং জরুরি প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্স পেতে চালু করা হয়েছে হট লাইন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে খুশি রোগী এবং তাদের স্বজনরা। তারা বলছেন, রোগী বা তাদের স্বজনরা এখন নিজেদের ইচ্ছেমতো অ্যাম্বুলেন্স সেবা নিতে পারবেন। বন্ধ হবে হয়রানি।
শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে রোগী পরিবহনের জন্য বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে একশ’য়ের বেশি অ্যাম্বুলেন্স চলাচল করে। এরা গড়ে তোলে প্রভাবশালী এক সিন্ডিকেট, যারা বছরের পর বছর ধরে রোগীদের জিম্মি করে বাড়তি ভাড়া আদায় করে থাকে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, হাসপাতাল চত্বরে অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের কারণে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হতে হয় রোগী এবং স্বজনদের। তারা জানান, ঢাকা থেকে আসা একটি অ্যাম্বুলেন্সে বরিশাল থেকে রোগী নিয়ে গেলে খরচ হয় সর্বোচ্চ ৩-৪ হাজার টাকা। অথচ সিন্ডিকেটের বাধায় ঢাকা থেকে আসা অ্যাম্বুলেন্সগুলো হাসপাতাল চত্বরে ঢুকতেই পারে না। রোগী বা তাদের স্বজনদের নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্সে রোগী বহন করতে হলেও সিন্ডিকেটকে দিতে হয় ৩-৪ হাজার টাকা পর্যন্ত কমিশন। না দিলে শেবাচিম হাসপাতালের সিন্ডিকেটের কাছ থেকেই সর্বনিম্ন ৮-১০ হাজার টাকায় বাধ্যতামূলক অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নিতে হয়। না হলে রোগীর প্রাণ গেলেও চলবে না অ্যাম্বুলেন্স।
এসব জেনেও হাসপাতালের জরুরি বিভাগের পাশেই সরকারি জমিতে অ্যাম্বুলেন্স স্ট্যান্ড বানিয়ে দিয়েছিলেন হাসপাতাল প্রশাসন।
সম্প্রতি স্বাস্থ্যখাত সংস্কার ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে ছাত্রজনতা। চলমান এই আন্দোলনের ২২তম দিনে হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যান হাসপাতালটির পরিচালক।
গত মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে মাত্র আধাঘণ্টার মৌখিক নোটিশে হাসপাতাল চত্বর থেকে কথিত বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট উৎখাত করেন পরিচালক। তিনি জানিয়েছেন, বেসরকারি কোনো অ্যাম্বুলেন্স হাসপাতাল চত্বরে অবস্থান করতে পারবে না। রোগী নিয়ে আসলে তাদের নামিয়ে দিয়ে দ্রুত হাসপাতাল চত্বর ত্যাগ করতে হবে। হাসপাতাল অভ্যন্তরে অ্যাম্বুলেন্স পার্কিং করে রোগী ধরতে পারবে না বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স। এর বিপরীতে সরকারি ৭টি অ্যাম্বুলেন্স পার্কিং করা হয়েছে জরুরি বিভাগের কাছে। পাশাপাশি সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া তালিকা টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে জরুরি বিভাগে। সরকার নির্ধারিত ভাড়া অনুযায়ী সরকারি অ্যাম্বুলেন্স বরিশাল সিটির মধ্যে যেখানেই যাক ভাড়া ৩০০ টাকা। এছাড়া সিটির বাইরে গেলে প্রতি কিলোমিটারে ১০ টাকা করে ভাড়া দিতে হবে রোগীদের। সরকারি যা বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের তুলনায় কয়েকগুণ কম। রোগী ও স্বজনরা হাসপাতালে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স পেতে ০১৭৮২৭৫৫৫০০ নাম্বারে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
তবে প্রভাবশালী অ্যাম্বুলেন্স দালাল চক্রের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে কিনা তার জন্য অপেক্ষা সবার। এর আগে ২০২২ সালের ১৭ নভেম্বর দালাল চক্রের জিম্মি দশা থেকে মুক্তি পেতে বরিশাল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমবায় সমিতি। তারা দাবি না মানলে অ্যাম্বুলেন্স ধর্মঘটের ডাক দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তখন। কিন্তু কোন কাজ হয়নি।
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে কেন্দ্র করে ১২০ জন মালিকের ১৩০টি বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স রোগীদের সেবা দেয় বলে জানা গেছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: শাহীনা আজমীন ।। স্বত্ব © বরিশাল নিউজ ২০২৫
Developed By NextBarisal
মন্তব্য লিখুন