বরিশাল নিউজ ডেস্ক
প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৫:০৯ পিএম আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৩:১৭ পিএম
পাটজাত পণ্যের উন্নয়নে নীতিনির্ধারণ ও তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন বোর্ড (জেডিপিবি) ।এরফলে ‘জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার’ (জেডিপিসি) বিলুপ্ত করা হবে।
এই ব্যাপারে আইনের খসড়া তৈরী হয়েছে।চূড়ান্ত অনুমোদণের জন্য শিঘ্রই তা মন্ত্রিসভায় তোলা হবে বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
গত শতকের আশির দশক থেকে বিশ্ববাজারে পাটপণ্যের চাহিদা ও মূল্যহ্রাস পাওয়ায় এবং স্বল্পমূল্যের কৃত্রিম তন্তুর আবির্ভাবের ফলে দেশের পাটশিল্প ব্যাপক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রচলিত পাটপণ্যের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের পাটপণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের প্রয়োজন হয়। এ কাজে সরকারকে সহায়তা দিতে ২০০২ সালে ইউরোপীয় কমিশনের অর্থায়নে জেডিপিসি প্রতিষ্ঠা হয়। পরে এ-সংক্রান্ত প্রকল্পের মেয়াদ দুই দফা বাড়ানো হয়। প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ের মেয়াদ ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়ে যায়। এর পরও জেডিপিসির কার্যক্রম চলমান রাখার জন্য একটি সরকারি আদেশ জারি করা হয়।
ইউরোপীয় কমিশনের দেওয়া ২০ কোটি টাকার একটি স্থায়ী আমানত থেকে জেডিপিসির ব্যয় নির্বাহ হয়। এই রিভলভিং ফান্ডের টাকা স্থায়ী আমানত হিসাবে ব্যাংকে রাখা আছে। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এই হিসাব তহবিল পরিচালনা করে। জেডিপিসির কার্যক্রম ঠিকভাবে বাস্তবায়নে নির্দেশনা দিতে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিবের নেতৃত্বে ২০ সদস্যবিশিষ্ট একটি স্টিয়ারিং কমিটি ‘গভর্নিং বডি’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। স্টিয়ারিং কমিটির পঞ্চম সভায় জেডিপিসিকে স্থায়ী প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় রূপান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে স্টিয়ারিং কমিটির অষ্টম সভায় জেডিপিসির কার্যক্রমকে অব্যাহত রাখার জন্য ফাউন্ডেশন বা বিধিবদ্ধ সংস্থার আদলে আইন প্রণয়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে জেডিপিসিকে একটি স্থায়ী কাঠামোয় রূপান্তরের জন্য আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জেডিপিসিকে কী ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা যায়, সে বিষয়ে সুপারিশ করার জন্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি প্রস্তাবিত আইনের একটি খসড়াসহ প্রতিবেদন দাখিল করে। পরে কমিটি থেকে প্রণীত খসড়া আইনের ওপর পাট ও বহুমুখী পাটজাত পণ্যের কাজের সঙ্গে জড়িত সাবেক পাঁচ কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীন অধিদপ্তর, সংস্থা, বোর্ডের প্রধান, বিজেআরআই এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পর্যায় পর্যন্ত সব কর্মকর্তার মতামত নেওয়া হয়। এ ছাড়াও মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে অংশীজনের মতামত নেওয়া হয়। খসড়া আইনটি চূড়ান্তকরণের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ‘আইনের খসড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষা সংক্রান্ত কমিটি’ও সুপারিশ করেছে।
পাটপণ্য বহুমুখীকরণ প্রক্রিয়া ও কার্যক্রমকে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য জেডিপিসি কর্তৃক ঢাকা, নরসিংদী, চট্টগ্রাম, রংপুর, যশোর, টাঙ্গাইল ও জামালপুরে বহুমুখী পাট শিল্প উদ্যোক্তা সেবাকেন্দ্র (জেইএসসি) স্থাপন করা হয়েছে। ’
২০১১ সালে ফ্রান্সের কান চলচ্চিত্র উৎসবে ১৫ হাজার অংশগ্রহণকারীর হাতে যে আকর্ষণীয় ডিজাইনের পাটের ব্যাগ তুলে দেয়া হয়েছিল, সেগুলো গিয়েছিল বাংলাদেশ থেকেই।
বর্তমানে নামিদামি গাড়ি তৈরির কোম্পানিও পাট ব্যবহার করছে।জার্মানির বিএমডব্লিউ কোম্পানির সর্বাধুনিক ইলেকট্রিক গাড়ির ভেতরে বক্স বডি ও এর উপাদান তৈরির কাঁচামাল হিসেবে পাট ব্যবহৃত হচ্ছে। জার্মানির ভক্সওয়াগন, জাপানের নিশান ও টয়োটা গাড়ির কাঁচামাল হিসেবেও বাংলাদেশের পাটের কদর রয়েছে।
দেশের ২৮২টি পাটপণ্যকে বহুমুখী পাটজাত পণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বিশ্ববাজারের চাহিদা বিবেচনা করে সরকার এ ঘোষণা দিয়েছেন। এর ফলে এসব পণ্য রপ্তানিতে ২০ শতাংশ নগদ সহায়তা পাবেন উদ্যোক্তারা।
সরকার পাটশিল্পের উন্নয়নে ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০,’ ‘পাট আইন, ২০১৭’, ‘জাতীয় পাটনীতি, ২০১৮’ প্রণয়ন করেছে।
উল্লেখ্য, জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারের (জেডিপিসি) মাধ্যমে পাটপণ্যের বহুমুখীকরণে প্রায় ৭০০ উদ্যোক্তা বিভিন্ন ধরনের পাটপণ্য উৎপাদন করছে যার বেশির ভাগ রপ্তানি হয়।
সম্পাদক ও প্রকাশক: শাহীনা আজমীন ।। স্বত্ব © বরিশাল নিউজ ২০২৪
Developed By NextBarisal
মন্তব্য লিখুন