বরিশাল নিউজ ডেস্ক
প্রকাশ : ০৫ মে ২০২৪, ০৬:১৬ পিএম
দেশে পরিবেশ সাংবাদিকতায় অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে বলেছেন দেশের বিশিষ্ট সাংবাদিকরা। পরিবেশ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে এক সাংবাদিকের নামে ১৩টি মামলার কথা বলেন তারা।
‘বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস ২০২৪’ উপলক্ষে শনিবার, ৪ মে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় ‘গ্রহের জন্য গণমাধ্যম: পরিবেশগত সংকট মোকাবেলায় সাংবাদিকতা’শীর্ষক আলোচনা সভা। সম্পাদক পরিষদ এ সভার আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেছেন, ‘বর্তমানে পরিবেশ বিপর্যয়ের জন্য প্রধানত উন্নত বিশ্ব দায়ী; তারা প্রতিশ্রুতি পূরণ করছে না। আমাদের এখানে পরিবেশ বিষয়ক সাংবাদিকতাকে উৎসাহিত করতে চাই। তবে হ্যাঁ, পরিবেশ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে মফস্বল এলাকায় নানা ব্যত্যয় ঘটে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘পরিবেশ ধ্বংস করে উন্নয়ন নয় এটা যেমন সত্য, তেমনি উন্নয়ন বন্ধ করে পরিবেশ রক্ষার পরিকল্পনা করলেও হবে না। আমার মনে হয় দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে।’
সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, ‘আমি আজ পরিবেশ সাংবাদিকতা করলে অনেকেই আমার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যাবে; অনেক ক্ষমতাধর ব্যক্তি দাঁড়িয়ে যাবে। তারা বিভিন্ন পেশা ও ব্যবসার জন্য আমাকে প্রতিহত করবে। সরকারের দ্ব্যর্থহীন সমর্থন পেলে শুধু পরিবেশ সাংবাদিকতার মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে সহায়ক শক্তি হিসেবে ব্যাপক ভূমিকা রাখা সম্ভব।
মাহফুজ আনাম বলেন, ‘আমরা শিক্ষা ও কৃষিতে উন্নতি করেছি। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ আমাদের অস্তিত্বের চ্যালেঞ্জ। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতার জন্য আমাদের এক-তৃতীয়াংশ ভূমি ডুবে যেতে পারে, এর নিরাপত্তা কোথায়? এর নিরাপত্তা কেউ দিতে পারবে না।’
নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (নোয়াব) সভাপতি ও ফরিদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য এ কে আজাদ বলেন, ‘পরিবেশ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় এক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এখনো ১৩টি মামলা চলছে। স্বাধীন গণমাধ্যমের সূচকে ২০২৩ সালে আমাদের অবস্থান ছিল ১৬৩তম। ২০২৪ সালে দুই ধাপ পিছিয়ে হয়েছে ১৬৫তম। ২০০তম হতে খুব বেশি সময় লাগবে না। আবার বর্তমান প্রতিমন্ত্রী সব জায়গায় জবাবদিহিতা নিশ্চিত করলে দুই বছরে এটা ১৫০-এ নেমে আসবে। নোয়াবের পক্ষ থেকে ওনার কাছে আমাদের এ প্রত্যাশা।’
জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, ‘বাংলাদেশে মানবসৃষ্ট কারণে তাপমাত্রা বেড়েছে। দেশের পরিবেশ ধ্বংসকারীদের অনেকেই গণমাধ্যমের মালিক। তারা ঢাকার চারপাশে জমি দখলকারী; তাদের প্রত্যেকের পত্রিকা, টিভি ও অনলাইন মিডিয়া আছে।
ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান বলেন, ‘পরিবেশ সাংবাদিকতাকে বিতর্কমুক্ত রাখতে হবে। দেশে বিতর্কিত হওয়ার মতো অনেক কিছু রয়েছে। বিতর্ক সেগুলো নিয়ে থাকুক।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘এ মুহূর্তে দেশে সবচেয়ে বেশি আলোচিত কথা হচ্ছে গাছ কাটা। পত্রিকা খুললে কোথাও না কোথাও গাছ কাটার খবর পাওয়া যায়।’
দেশ রূপান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তফা মামুন বলেন, ‘পরিবেশ সাংবাদিকতার বিষয়টি আমার মনে হয় খুব বেশি গণমাধ্যমে আসছে না। এর একটা বড় কারণ হচ্ছে এ নিয়ে আমাদের মধ্যে সচেতনতার ঘাটতি রয়েছে। এছাড়া পরিবেশ সাংবাদিকতা নিয়ে আমাদের আগ্রহ এখনো অনেক কম।
সভার প্রতিপাদ্য নিয়ে সূচনা বক্তব্য দেন দ্য ডেইলি স্টারের প্রধান প্রতিবেদক পিনাকী রায়। তিনি বলেন, ‘পরিবেশের সংকট মোকাবেলার জন্য পুরো বিশ্বকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বসবাসের জন্য ঢাকা শহরে যে সম্পদ রয়েছে, আমরা তা এরই মধ্যে ব্যবহার করে ফেলেছি। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ঢাকা শহরে থাকতে পারবে কিনা সে সিদ্ধান্ত আমাদের নিতে হবে।’
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও বণিক বার্তার সম্পাদক ও প্রকাশক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ। এতে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান ও ইনকিলাব সম্পাদক এএমএম বাহাউদ্দীন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: শাহীনা আজমীন ।। স্বত্ব © বরিশাল নিউজ ২০২৪
Developed By NextBarisal
মন্তব্য লিখুন