Advertise top
আদালত-অপরাধ

সিনহা হত্যার ‘মাস্টারমাইন্ড’ প্রদীপই, লিয়াকতের গুলিতেই মৃত্যু: হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৪৯ পিএম    

হাইকোর্ট

টেকনাফের সেই দোর্দণ্ড প্রতাপশালী সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশই মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী বা ‘মাস্টারমাইন্ড’। আর তার সাজানো ছক বা পরিকল্পনা অনুযায়ীই পরিদর্শক লিয়াকত আলী ঠান্ডা মাথায় সিনহার বুকে গুলি চালিয়েছেন। বহুল আলোচিত এই হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ে এমন লোমহর্ষক তথ্যই উঠে এসেছে।

সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে আজ রবিবার (২৩ নভেম্বর) ৩৭৮ পৃষ্ঠার এই পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। এর আগে গত ২ জুন বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ প্রদীপ-লিয়াকতের ফাঁসি এবং ৬ জনের যাবজ্জীবন বহাল রেখে রায় দিয়েছিলেন।

প্রদীপের পৈশাচিকতা: মৃত্যু নিশ্চিত করতে বুকে লাথি ও গলা চেপে ধরা 

হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে প্রদীপের নিষ্ঠুরতার চিত্র ফুটে উঠেছে। আদালত বলেছেন, এটা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত যে প্রদীপই এই খুনের মূল হোতা। ঘটনাস্থলে এসে তিনি মৃত্যু নিশ্চিত করতে সিনহার বুকের বাম পাঁজরে জুতা পরা পা দিয়ে এতো জোরে আঘাত করেন যে, বুকের দুটি হাড় ভেঙে যায়। এখানেই থামেননি, গলায় পা দিয়ে চেপে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

সরকারি অস্ত্রে লিয়াকতের গুলি 

রায়ে বলা হয়, আগের পরিকল্পনা মতোই লিয়াকত ঘটনাস্থলে সরকারি পিস্তল নিয়ে হাজির হন। সিনহা ছিলেন সম্পূর্ণ নিরস্ত্র। তাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই শরীরের ওপরের অংশে পরপর চারটি গুলি করেন লিয়াকত। ময়নাতদন্ত রিপোর্টেও গুলির আঘাতেই মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে।

ফাঁসি ও যাবজ্জীবন কেন বহাল 

যেহেতু প্রদীপ মূল পরিকল্পনাকারী এবং লিয়াকত সরাসরি গুলি করে হত্যা করেছেন, তাই বিচারিক আদালতের দেওয়া সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডই বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। আদালত মনে করেছেন, তাদের অপরাধের ধরণ অনুযায়ী এটাই সঠিক বিচার।

পাশাপাশি, এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকায় এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল রুবেল শর্মা, সাগর দেব এবং স্থানীয় সোর্স নুরুল আমিন, মোহাম্মদ আইয়াজ ও মো. নিজাম উদ্দিনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও বহাল রাখা হয়েছে। হাইকোর্টের মতে, বিচারিক আদালত তাদের অপরাধ বিচার-বিশ্লেষণ করেই সঠিক সাজা দিয়েছেন।

সিনহার ‘অপরাধ’ ছিল অন্যায়ের প্রতিবাদ 

রায়ে উঠে এসেছে হত্যার পেছনের আসল কারণ। ইউটিউব চ্যানেল ‘জাস্ট গো’-এর জন্য ভিডিও করতে গিয়ে সিনহা প্রদীপ ও তার বাহিনীর চাঁদাবাজি, গুম আর ক্রসফায়ারের মতো অপকর্মের খবর জেনে ফেলেছিলেন। প্রদীপ তাকে এলাকা ছাড়ার হুমকিও দিয়েছিলেন। কিন্তু সিনহা দমে যাননি। তাই পথের কাঁটা সরাতে প্রদীপ তার সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে হত্যার এই গভীর ষড়যন্ত্র করেন। এমনকি ডাকাত সাজিয়ে সিনহাকে পিটিয়ে মারার চেষ্টাও ছিল সেই পরিকল্পনার অংশ, যার জন্য মসজিদের মাইকে ঘোষণা পর্যন্ত দেওয়া হয়েছিল।

মামলার ইতিবৃত্ত 

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ সড়কে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা। এরপর ২০২২ সালে কক্সবাজারের আদালত প্রদীপ ও লিয়াকতকে ফাঁসি দেন। সেই রায়ই হাইকোর্টে বহাল রইল এবং আজ তার পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশ পেল।


মন্তব্য লিখুন


সম্পাদক ও প্রকাশক: শাহীনা আজমীন ।। স্বত্ব © বরিশাল নিউজ ২০২৫

Developed By NextBarisal