Advertise top
নির্বাচন

`প্রিসাইডিং অফিসারের ঘাড়ে কয়টা মাথা'

বরিশাল নিউজ ডেস্ক

প্রকাশ : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:০৯ পিএম    

`প্রিসাইডিং অফিসারের ঘাড়ে কয়টা মাথা

 

‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: প্রত্যাশা ও বাস্তবতা’ শীর্ষক এক কর্মশালার আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন।  রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে বুধবার এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রত্যাশা ও বাস্তবতা বুঝতে চারজন আলোচক, চারজন পর্যালোচক এবং বেশ কয়েকজন অতিথি অংশ নেন।

 

স্বাগত বক্তব্যে কাজী হাবীবুল আউয়াল বলেন, ‘আমাদের দেশে মাস্তান ও পেশিশক্তি আছে। ফলে প্রিসাইডিং অফিসার অসহায় হয়ে পড়েন। আমরা নির্বাচন বাতিল করতে পারব। তবে যার জন্য নির্বাচন বাতিল হবে তিনি আর ভোট করতে পারবেন না।

 

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমরা মুখে শুধু বলি নির্বাচন কমিশন ক্ষমতাবান, কিন্তু বাস্তবে কিছুই নাই।  ইসির উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা সবার থেকে পরামর্শ শুনছেন কিন্তু পরামর্শ বাস্তবায়ন করতে পারেননি। না পারার কারণ আপনাদের ব্যাখ্যা করা দরকার। আপনারা প্রিসাইডিং অফিসারের ক্ষমতার কথা বলছেন যে সুষ্ঠু পরিবেশ মনে না হলে সব ফেলে তিনি চলে আসবেন। প্রিসাইডিং অফিসারের ঘাড়ে কয়টা মাথা যে তিনি সবকিছু ফেলে চলে আসবেন।’

 

বৈঠকে ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, ‘বাস্তবে নির্বাচন ব্যবস্থা বিশ্বাসহীনতায় রয়েছে। একটা ভালো নির্বাচন হলেই যে সব সমস্যা সমাধান হবে তা নয়। তবে ভালো নির্বাচন সমাধানের সূচনা হতে পারে। রাষ্ট্রদূতদের লায় দিতে দিতে বিদেশিদের টেনে আনি। এর ফল কি তা আমরা জানি?’

 

সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আশ্বস্তবোধ করছে বলে দাবি করে সিইসি বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত আশ্বস্ত বোধ করছি। প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের তরফ থেকে আগামী নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার কথা বলা হয়েছে। এ প্রতিশ্রুতি সরকার দিয়েছে। এর আগে কিন্তু সরকার কখনো এমন প্রতিশ্রুতি দেয়নি। এবারই প্রথম সরকার এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আইনমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রী, সেতুমন্ত্রী; উনারাও সরকার শব্দটা ব্যবহার করেছেন। প্রধানমন্ত্রীও স্পষ্টভাবে কয়েকবার বলেছেন; সরকার আগামী নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করার নিশ্চয়তা দিচ্ছে। আমি বলব, আস্থা রাখতে চাই।’

 

সিইসি বলেন, নির্বাচনটা ভালো হবে কিনা- সেটা নির্ভর করছে ‘পলিটিকাল উইল’ (রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা) এর ওপর। আন্তরিক পলিটিকাল উইল থাকতে হবে। এটা আমার থেকে আসবে না। পলিটিক্স থেকে আসতে হবে বা সরকার থেকে আসতে হবে।’

 

সরকার ও দলকে সবসময় তালগোল পাকিয়ে ফেলা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিভাজনটা বুঝতে হবে। সরকার ও দল ভিন্ন জিনিস। সরকারি দল বলতে কোনো শব্দ সংবিধানে নেই। এটা হয়ত মুখে বলে থাকি। যখনই একটা সরকার হয়ে যাবে, তখন সেসব দলের, সব জনগণের, পুরো দেশকে রিপ্রেজেন্ট করে।’

 

সমঝোতা প্রসঙ্গ টেনে সিইসি বলেন, ‘আমরা বারবার বলেছি একটা সমঝোতার কথা, আপনারা চায়ের টেবিলে বসেন। কিন্তু পলিটিকাল কালচার এমন হয়েছে, কেউ কারও সঙ্গে বসতে চাচ্ছেন না। ইসি এ সমস্যার সমাধান করে না। দুঃখজনক হলো, সে ধরনের সিভিল সোসাইটিও দেখতে পাচ্ছি না।’

 

 কর্মশালায় পর্যালোচক হিসেবে বক্তব্য দেন সাবেক রাষ্ট্রদূত ও বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের সভাপতি হুমায়ুন কবির। তিনি তাঁর বক্তব্যের একপর্যায়ে বলেন, সাধারণ মানুষের ধারণা, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের সংশোধনীর মাধ্যমে ইসি নিজেদের ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছে। আরপিও সংশোধন করে নির্বাচন কমিশন নিজেদের ক্ষমতা কেন কমাল। জনগণের প্রত্যাশা ছিল, সিইসির সক্ষমতা আরও বাড়বে। বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষ হতাশ।

 

এই বক্তব্যের মাঝখানেই কথা বলতে শুরু করেন সিইসি হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের সক্ষমতা কমিয়েছি, এটা সম্পূর্ণ অপপ্রচার। গণমাধ্যমের একটি বিষয় থাকে, ইসিকে খাটো করে দেখানো। জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। সারা দেশে প্রচার হচ্ছে, ইসি নিজের পায়ে কুড়াল মেরেছে। ইসি মাথা নিচু করে সরকারের পক্ষে চলে গেছে, এটা মোটেই সত্য নয়।’

 

সিইসি হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচনের পরে রিটার্নিং কর্মকর্তার পাঠানো প্রতিবেদন চোখ বন্ধ করে গেজেট করার বিধান ছিল। নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠলে রিটার্নিং কর্মকর্তার পাঠানো প্রতিবেদন স্থগিত রেখে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা যুক্ত করা হয়েছে। অনেক সময় প্রিসাইডিং কর্মকর্তা পেশিশক্তির কারণে কেন্দ্রে অসহায় হয়ে পড়েন। এমন পরিস্থিতি হলে তিনি পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট ডাকবেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে কেন্দ্র থেকে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা চলে আসতে পারবেন। জনগণের মতের প্রতিফলন হবে না, পরিস্থিতি এমন হলে কেন্দ্র ত্যাগ করে চলে আসতে পারবেন।

 

সিইসি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারেনি। সাধারণের ধারণা, সরকারকে জেতাতে দস্তখত করে ফেলেছে। এতটা কাউয়ার্ড (কাপুরুষ) হইনি। নৈতিকতা বিবর্জিত অতটা হইনি।’


মন্তব্য লিখুন


সম্পাদক ও প্রকাশক: শাহীনা আজমীন ।। স্বত্ব © বরিশাল নিউজ ২০২৪

Developed By NextBarisal