Advertise top
রাজনীতি

টুঙ্গিপাড়ায় নিরাপত্তা, পুলিশ হেফাজতে রান্না করা খাবার, প্রতিকৃতি ভাঙ্গচুর

বরিশাল নিউজ ডেস্ক

প্রকাশ : ১৫ আগষ্ট ২০২৫, ১১:২৭ পিএম    

বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎবার্ষিকীর খাবার পুলিশ হেফাজতে
টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে কঠোর নিরাপত্তা । ছবি: সংগৃহীত

শাহাদাৎবার্ষিকীর খাবার পুলিশ হেফাজতে

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫০তম শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষে মানিকগঞ্জে দোয়া-মাহফিলের জন্য রান্না করা খাবার নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।

 

মানিকগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য ও গণফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা মফিজুল ইসলাম খান কামালের বাসায় শুক্রবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।

 

মফিজুল ইসলাম খান কামাল বলেন, “বঙ্গবন্ধু কোনো রাজনৈতিক দলের একক সম্পত্তি নন; তিনি বাঙালি জাতির জনক। তার শাহাদাৎবার্ষিকী পালন করতে আমার স্বাধীনতা আছে। শুক্রবার সকালে আমার বাসায় কালো পতাকা উত্তোলন, কোরআনখানি ও আলোচনা সভা হয়েছে।”

 

তিনি অভিযোগ করেন, দুপুরে দোয়া মাহফিলের জন্য খিচুড়ি রান্না করা হচ্ছিল। এ সময় মানিকগঞ্জ সদর থানার পুলিশ এসে রান্নার আগুন পানি দিয়ে নিভিয়ে দেয়। পরে পুলিশের অনুরোধে খাবার রান্না করা হলেও, পুলিশ সেই রান্না করা খাবার হেফাজতে নিয়েছে।

 

বিকেলে মফিজুল ইসলাম খান কামাল তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, “১৫ আগস্ট, জাতীয় শোক দিবস-২০২৫, নৈতিক দায়িত্বে পালন করেছি। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন। সকালেই কালো পতাকা উত্তোলন, কোরআন খতম ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। আয়োজন ছিল কাঙ্গালী ভোজের; বাকিটা ইতিহাস।”

 

মানিকগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস.এম. আমানউল্লাহ জানিয়েছেন, “উপরের নির্দেশনা অনুযায়ী বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎবার্ষিকী অনুষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে। রান্না করা খাবার পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।”

কলারোয়ায় রাতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল, দুপুরে ভাঙচুর

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫০তম শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে বৃহস্পতিবার রাতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে কয়েকজন প্রতিকৃতিটি ভেঙে দিয়েছে।

 

বৃহস্পতিবার, ১৫ আগস্ট রাত সাড়ে ১২টার দিকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আওয়ামী লীগের ব্যানারে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন কয়েকজন ব্যক্তি।

 

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মো. রাসেল হোসেন নামের একজন প্রতিকৃতির সামনে পুষ্পমাল্য রেখে যান। এ সময় তার সঙ্গে থাকা আর কাউকে শনাক্ত করা যায়নি।

 

কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, গভীর রাতে দুজন এসেছিলেন। একজন ফুল দিয়েছেন। আরেকজন মুঠোফোনে ভিডিও করছিলেন।

 

এদিকে আজ দুপুরের দিকে প্রতিকৃতিটি ভেঙে দেওয়া হয়। বেলা তিনটার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাতক্ষীরা শাখার সাবেক আহ্বায়ক আরাফাত হোসাইন ফেসবুক পোস্টে অভিযোগ করেছেন, কলারোয়ায় শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি ভাঙার সময় প্রশাসনের লোকজন বাধা সৃষ্টি করেছেন।

 

আরাফাত লিখেছেন, ‘কলারোয়ায় মুজিবের প্রতিকৃতি ভাঙতে ইউএনওর বাধা। বাহ বাহ ইউএনও বাহ। ডিসি মোস্তাক আহমেদ কি আওয়ামী পুষতেছে?’ তিনি আরও লেখেন, ‘ইউএনও কীভাবে মুজিব রেখে অফিস করত? এই জুলাই বিপ্লবের পরেও তিনি কীভাবে বলেন, “ভাঙার দরকার নেই, এখানে আমরা অন্য কিছু বানাব।”

 

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জহুরুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, ‘আজ আমি ছুটিতে আছি, কলারোয়ায় নেই। একজন ছাত্র প্রতিনিধি পরিচয়ে আমাকে ফোন দিলে আমি তাকে বলেছিলাম স্থাপনাটি ভেঙো না, আমরা ওখানে কলারোয়া উপজেলার ম্যাপ লাগিয়ে দেব। প্রতিকৃতি ভাঙার ব্যাপারে কোনো ধরনের বাধা দেওয়া হয়নি।’

 

টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে কঠোর নিরাপত্তা বলয়

ইত্তেফাক জানাচ্ছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫০তম শাহাদাৎবার্ষিকীতে তার জন্মস্থান গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় নিরাপত্তা জোরদার হয়েছে। বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট রাত থেকে টুঙ্গিপাড়াকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়। শুক্রবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আরও কড়াকড়ি আরোপ করে।

 

সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সের ভেতরে ও বাইরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর ছিলেন। সাধারণ মানুষকেও সমাধিসৌধে যেতে দেওয়া হয়নি। আশপাশ এলাকায় কেউ দাঁড়াতে পারেনি। টুঙ্গিপাড়ার রাস্তাঘাট ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। সাধারণ মানুষকে তেমন একটা চলাফেরা করতে দেখা যায়নি। রাস্তাঘাট ছিল ফাঁকা।

 

শুধু টুঙ্গিপাড়া সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সে নয়, গোপালগঞ্জ সদরসহ গোটা জেলাতেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়। জেলাজুড়ে পুলিশ–এপিবিএনসহ দেড় সহস্রাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন।

জেলার স্পর্শকাতর স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে। জেলায় যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়।

 

উপজেলার গওহরডাঙ্গা চৌরঙ্গী মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি পাটগাতী বাসস্ট্যান্ড, কলেজ সড়ক, বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ সড়ক, বাইপাস সড়কসহ বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে প্রবেশের স্থানগুলোতে এপিবিএনের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন।

 

বঙ্গবন্ধুর সমাধির মূল প্রবেশগেটসহ অন্য দুটি গেটও বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১ নম্বর গেটের সামনে একটি প্রিজন ভ্যান ও একটি অত্যাধুনিক গাড়ি নিয়ে পুলিশ সদস্যরা অবস্থান করেন। আর ২ নম্বর ও ৩ নম্বর গেটের প্রবেশগেটে পুলিশ মোতায়েন ছিল। তবে সমাধির ৩ নম্বর গেটের পাশে কিছু দোকানপাট খোলা ছিল।

 

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালিত হতো। দিনটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ, শোকসভা ও দোয়া-মিলাদ ছিল নিয়মিত আয়োজনের অংশ। দিনটিতে বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধসহ টুঙ্গিপাড়ায় কালো পতাকা উত্তোলন করা হতো। সর্বত্র বিরাজ করত শোকাবহ পরিবেশ। লাখ-লাখ মানুষের জনসমাগম হতো। আর দলীয় নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন রীতিমতো প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দিনটিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করত।

 

কিন্তু এ বছরের চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ছিল না আগের মতো কোনো আয়োজন। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এবার তা আর দেখা যাচ্ছে না।

 

এ বিষয়ে টুঙ্গিপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোরশেদ আলম বলেন, টুঙ্গিপাড়ায় ১৫ আগস্ট উপলক্ষে কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এখানো কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি কিংবা ১৫ আগস্ট পালনের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ রয়েছে।

 খবর ইত্তেফাক

 


মন্তব্য লিখুন


সম্পাদক ও প্রকাশক: শাহীনা আজমীন ।। স্বত্ব © বরিশাল নিউজ ২০২৫

Developed By NextBarisal