বরিশাল নিউজ ডেস্ক
প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:০১ পিএম
সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কলেজটির শিক্ষার্থীরা। এর আগে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করাসহ সাত দফা দাবিতে আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মহাখালীতে কলেজের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। এতে আমতলী ও গুলশান ১–এর মধ্যকার সড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বিকাল সোয়া চারটার দিকে কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান হ্যান্ডমাইকে এ ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আর কোথাও যাব না। কারও আসতে হলে তিতুমীরের সামনে আসতে হবে। এখানে এসে তিতুমীরের সামনেই বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির ঘোষণা দিতে হবে। রাষ্ট্র আমাদের সঙ্গে দ্বিচারিতামূলক আচরণ করছে। তারা আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই সাত কলেজের সমন্বয়ে আলাদা সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা করছে।’
স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করাসহ ৭ দফা দাবিতে বুধবার বিকাল ৫টা থেকে তিতুমীর কলেজের ৫ শিক্ষার্থী অনশন শুরু করেন। আজ বৃহস্পতিবার সেই অনশনে আরও দুজন যুক্ত হন। তবে আজ সকালে কলেজ কর্তৃপক্ষ অনশনকারী শিক্ষার্থীদের তাচ্ছিল্য করেছে, এমন দাবি নিয়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কলেজের সামনে সড়কে নেমে আসেন বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা। তারা সড়কের উভয় পাশের যান চলাচল বন্ধ করে দেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়া সাধারণ মানুষকে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
অন্যদিকে বেলা আড়াইটার দিকে সড়কে অনশন ও বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। এতে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আলী আহাম্মেদ বলেন, তাদের আগের দাবিগুলোর সঙ্গে নতুন দাবি যুক্ত হয়েছে। সেটি হলো, কলেজের এই প্রশাসনকে সরাতে হবে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা এ অবস্থান নেন। ফলে কলেজের সামনের সড়কের দুই পাশে (আমতলী থেকে গুলশান ১ এবং গুলশান ১ থেকে আমতলী) যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
শিক্ষার্থীদের ৭ দফা দাবি
শিক্ষার্থীদের সাত দফা দাবিগুলো হলো তিতুমীরকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ। তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠন করে ২০২৪-২৫ সেশনের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করা। অবিলম্বে শিক্ষার্থীদের শতভাগ আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ নতুবা অবিলম্বে শতভাগ শিক্ষার্থীদের আবাসিক খরচ বহন। ২০২৪-২৫ সেশন শিক্ষাবর্ষ থেকে আন্তর্জাতিক মানসম্মত ন্যূনতম দুটি বিষয় (আইন ও সাংবাদিকতা) সংযোজন। একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন পিএইচডিধারী শিক্ষক নিয়োগ। শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে আসনসংখ্যা সীমিতকরণ। আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাদানের লক্ষ্যে গবেষণাগার বিনির্মাণের লক্ষ্যে জমি ও আর্থিক বরাদ্দ নিশ্চিতকরণ।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সরকারি কলেজগুলোকে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রথম দফায় রাজধানীর সাতটি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। কলেজগুলো হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। এসব কলেজে শিক্ষার্থী প্রায় দুই লাখ।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রায় ৮ বছর আগে ২০১৭ সালে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছাড়াই তাড়াহুড়া করে এই সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়েও পরীক্ষা, মানসম্মত শিক্ষাসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধান পুরোপুরি হয়নি। ফলে বারবার আন্দোলনে নেমেছেন এই সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সূত্রগুলো বলছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই গত সোমবার কলেজগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন না রাখার ঘোষণা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পরবর্তী করণীয় কী হবে, তা নিয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বৈঠক করেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি।
সম্পাদক ও প্রকাশক: শাহীনা আজমীন ।। স্বত্ব © বরিশাল নিউজ ২০২৫
Developed By NextBarisal
মন্তব্য লিখুন