বরিশাল নিউজ ডেস্ক
প্রকাশ : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭:২৯ পিএম আপডেট : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭:৩৩ পিএম
রজব মাসের ২৬ তারিখের রাতটি মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মহিমান্বিত রাতটি ইবাদত-বন্দেগিতে কাটিয়ে থাকেন। আল্লাহর সন্তুষ্টি র্অজনে এই রাতে তাঁরা পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত, নফল নামাজ আদায়, জিকির ও দোয়া-দরুদ করেন।
বৃহস্পতিবার, ৮ ফেব্রুয়ারি জোহরের নামাজের পর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে শবে মেরাজের গুরুত্ব ও তাৎর্পয নিয়ে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ইসলামিক ফাউন্ডশেন।
মেরাজের রাতে মহানবী (সা.) সাত আসমান পেরিয়ে মহান আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করনে । পবিত্র মেরাজ শরিফের ঘটনা ঘটার আগে রাসূল (সা.)-এর ওপর একের পর এক দুর্যোগ নেমে এসেছিল। স্নেহময় চাচা আবু তালেবের ইন্তেকাল, প্রিয়তমা স্ত্রী খাদিজা (রা.)-এর ইন্তেকাল এবং তায়েফবাসীদের অভাবনীয় অত্যাচার।
প্রিয় রাসূল সা.এর নবুয়তের মহাগুণাবলির অন্যতম উজ্জ্বল নিদর্শন হলো মেরাজের ঘটনা। নবুয়ত ঘোষণার একাদশ বছরে কারও মতে দশম বছরে রজব মাসের ২৬ তারিখ দিবাগত রাতে প্রথমে কাবা শরিফ থেকে জেরুজালেমে অবস্থিত বায়তুল মোকাদ্দাসে গমন করেন এবং সেখানে তিনি নবিদের জামাতে ইমামতি করেন। অতঃপর বোরাক নামক বিশেষ বাহনে আসীন হয়ে ঊর্ধ্বলোকে সপ্তম আকাশে সিদরাতুল মুনতাহায় গমন করেন মহানবি সা.।
এর আগে আকাশের সাত স্তরে মহানবিকে স্বাগত জানান হজরত আদম (আ.), হজরত ঈসা (আ.), হজরত ইয়াহইয়া (আ.), হজরত ইদ্রিস (আ.), হজরত হারুন (আ.), হজরত মুসা (আ.) এবং হজরত ইবরাহিম (আ.)। সপ্তম আকাশে পৌঁছে জিবরাইল (আ.) জানালেন, এরপর তাঁর যাওয়ার অনুমতি নেই। অতঃপর রফরফ নামে একটি যানে করে রাসূল সা. ৭০ হাজার নুরের পর্দা ভেদ করে আরশে আজিমে পৌঁছান।
সেখানে এক ধনুক দূরত্ব থেকে আল্লাহর সঙ্গে তার কথোপকথন হয়।
রাসূল (সা.) প্রেমাস্পদকে সম্ভাষণ জানালেন ‘আত্তাহিয়্যাতু ল্লিল্লহি ওয়াসসালাওয়াতু ওয়াত তাইয়্যিবাত’ বলে। অর্থাৎ আমার বাচনিক সব উপাসনা, দৈহিক সব সাধনা এবং আর্থিক সব সেবা খোদার জন্য নিয়োজিত। উত্তরে আল্লাহপাক জানালেন: ‘আসসালামু আলাইকা আইয়্যুহান নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। অর্থাৎ হে নবি, আপনার প্রতি সালাম, খোদার অপার করুণা আপনার ওপর বর্ষিত হোক এবং আপনি বরকতযুক্ত হোন। রাসূল (সা.) তাঁর উম্মতদের ভুলে থাকলেন না, তিনি একা কেন এত বরাত যুক্ত হবেন? তাই তিনিও বলে উঠলেন: ‘আসসালামু আলাইনা ওয়াআলা ইবা-দিল্লাহিস সলিহিন’।
অর্থাৎ হে দয়াময়, শুধু আমার প্রতি নয় বরং আমাদের প্রতি (অর্থাৎ আমার ও আমার উম্মতের প্রতি) ও আপনার নেক বান্দাদের প্রতি করুণা বর্ষিত হোক। রাসূল (সা.)-এর এহেন কথায় আরশের ফেরেশতারা প্রত্যেকে আনন্দে বলে উঠল: ‘আশহাদু আল্লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াআশহাদু আন্না মহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু।’
অর্থাৎ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং হজরত মুহাম্মদ (সা.) নিশ্চয়ই আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। তাজেদারে মদিনা (সা.) তার উম্মতদের কতটা ভালোবাসেন তার উজ্জ্বল নিদর্শন এ কথোপকথনের মধ্যেই ফুটে উঠেছে, এটি সাধারণ কোনো ব্যাপার নয়। প্রেমময় প্রভুর সন্নিকটে থেকে তিনি তার উম্মতদের কথা ভুলে থাকেননি।
মেরাজের রাতে তিনি আল্লাহপাকের কাছ থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নিয়ে এলেন। নামাজকে আরবিতে সালাত বলে।
এ সালাত শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। সালাতের এক অর্থ হচ্ছে দুইকে এক করা, নামাজ-আবদ ও মাবুদের এক হয়ে যাওয়া জিনিস। বান্দা যখন নামাজে দাঁড়ায় তখন তাকে ভাবতে হয়, প্রেমময় প্রভু তাকে দেখছেন অথবা তিনিই তাকে দেখছেন। একেই মেরাজুল মুমেনিন বলে। এভাবে মুমিন বান্দারা প্রত্যহ পাঁচবার মেরাজের স্বাদ গ্রহণ করে থাকেন।
সব মুমিন মুসলমান, কিন্তু সব মুসলমান মুমিন নয়।
সূরা হুজরাতের ১৪ নং আয়াতে আছে- ‘মরুবাসীগণ বলে ঈমান এনেছি হে রাসূল আপনি বলুন-তোমরা শান্তির পথে এসেছ মাত্র, ইমান তোমাদের হৃদয়ে প্রবেশ করেনি। সুতরাং কালেমা মুখে উচ্চারণ করলে কিংবা ধর্মের আনুষ্ঠানিকতা পালন করলেই মানুষ মুমিন হয় না, মুসলমান হতে পারে।
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ তার মনের প্রবৃত্তি আমার আনীত দ্বীন ও শরিয়তের অধীনে না হবে। (মেশকাত) ।
পূর্ণ মুমিনের চিহ্ন হচ্ছে: আল্লাহর রুবুবিয়াতে পরিপূর্ণ বিশ্বাস করা আল্লাহর উপস্থিতি প্রতিক্ষণে অনুভব করা, আল্লাহর ইচ্ছার মধ্যে নিজেকে বিলীন করা এবং তাঁর রাসূল (সা.)কে সর্বান্তঃকরণে অনুসরণ করা [সৈয়দ রশীদ আহমেদ জৌনুপরী]। নামাজের ভেতর অনেক রকম ইবাদত একত্রে হয়ে থাকে। যেমন আরশে মোয়াল্লায় ফেরেশতার দল কেউ কিয়ামে, কেউ রুকু আবার কেউ সেজদায় থাকেন। আরশের ফেরেশতাদের অনুকরণ রয়েছে এ নামাজে। তাশাহহুদে রয়েছে মেরাজের রাতের আল্লাহ ও তার হাবিবের কথোপকথন। এ ছাড়া দরুদ, কুরআন তেলাওয়াত, সালাম, জিকির, তাসবিহ-তাহলিল ইত্যাদি। এ যেন একের মধ্যে বহুল সমাবেশ। নামাজ পড়তে বলার পরিবর্তে বলা হয়েছে নামাজকে সযত্নে রক্ষা করতে। শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। ‘পবিত্র কুরআন পাকে নামাজের কথা যতবার বলা হয়েছে ততবারই জাকাতের কথা বলা হয়েছে, ত্যাগ যেখানে নেই সেখানে প্রেম নেই। আর প্রেম যেখানে নেই সেখানে ধর্ম নেই। যারা ধর্মের মর্মমূলে প্রেমকে উপলব্ধি করেন না তাদের কাছে রুকু রুকুই, সেজদা সেজদাই।
এক ধরনের শারীরিক কসরত তাদের কাছে ধর্ম [সত্যের প্রকাশ] ।
সূরা তওবার ১৩৬ নং আয়াতে আরবি ১২টি মাসের মধ্যে জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব মাসকে অত্যন্ত পবিত্র বলা হয়েছে, এ মাসগুলোর সম্মানার্থে অপকর্ম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। সঙ্গে এবাদত বন্দেগির পরিমাণ বাড়াতে হবে। আবু দাউদ থেকে বর্ণিত হাদিসে ৫টি রাতে আল্লাহপাক দোয়া কবুল করে থাকেন। ২৬ রজবের দিবাগত রাত, অর্থাৎ সবে মেরাজ, ১৪ সাবানের দিবাগত রাত, দুই ঈদের আগের রাত এবং লাইলাতুল কদরের রাত, তবে এ রাতে অবাধ্য সন্তান, অবাধ্য স্ত্রী এবং সুদখোরের দোয়া কবুল হবে না।
সম্পাদক ও প্রকাশক: শাহীনা আজমীন ।। স্বত্ব © বরিশাল নিউজ ২০২৪
Developed By NextBarisal
মন্তব্য লিখুন