Advertise top
ধর্ম

ইসলামের দৃষ্টিতে শোক পালন

ড. এস এম জাহাঙ্গীর আলম

প্রকাশ : ১৮ আগষ্ট ২০২৩, ১২:০৮ পিএম     আপডেট : ১৮ আগষ্ট ২০২৩, ১২:১০ পিএম

ইসলামের দৃষ্টিতে শ

 

সুখে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ আর দুঃখে ধৈর্য ধারণ করা ইমানের দাবি। নবি (স.)-এর জীবনেও শোক এসেছে। বিভিন্ন সময় তার প্রিয়জনদের হারাতে হয়েছে। জন্মের আগে পিতাকে আর ছয় বছর বয়সে মমতাময়ী মাকে হারান। আট বছর বয়সে দাদাকে হারিয়ে একেবারে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন। নবুয়তের দশম বছরের রমজান, মতান্তরে শাওয়াল মাসে নবি (স.)-এর চাচা আবু তালিব ইন্তেকাল করেন। এই শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই তিন বা পাঁচ দিনের ব্যবধানে তার সহধর্মিণী খাদিজাতুল কুবরা (রা.) ইন্তেকাল করেন। তাদের ইন্তেকালে রসুল (স.) শোকার্ত হয়ে পড়েন। নবি (স.)-এর এমন প্রিয় দুজন ব্যক্তির ইন্তেকালের কারণে ঐ বছরকে ‘আমূল হুজুন’ বা ‘শোকের বছর’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। এ ছাড়া নবি (স.)-এর ছেলেমেয়েদের মধ্যে ফাতিমা (রা.) ছাড়া সবাই তার জীবদ্দশায় ইন্তেকাল করেন। সন্তান হারানোর শোক তাকে সইতে হয়েছে।

 

আপনজনের মৃত্যুতে সীমাহীন কষ্ট হওয়া স্বাভাবিক। মহান আল্লাহ এই কষ্টের বিনিময় দান করবেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে সেই প্রতিদান প্রাপ্তির আশায় ধৈর্য ধারণ করতে হবে। ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ (নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং আমরা তারই সান্নিধ্যে ফিরে যাব) বলে আল্লাহর দিকে ধাবিত হতে হবে। ভাগ্যের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে। মনকে শক্ত করার চেষ্টা করতে হবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (স.) বলেছেন, মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি যার কোনো প্রিয়জনকে উঠিয়ে নিই আর সে ধৈর্য ধারণ করে এবং নেকির আশা রাখে আমি তাকে জান্নাত দিয়েই সন্তুষ্ট হব।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৪০১)। এর পরও নীরব কান্না হবে। মনের বেদনায় চোখ বেয়ে কান্না ঝরতে থাকবে। তাতে সমস্যা নেই। কিন্তু চিত্কার করে, ইনিয়ে-বিনিয়ে, বুক চাপড়ে কাঁদা, মাতম করা এবং জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলা ইসলামের পদ্ধতি নয়। এগুলো জাহিলি যুগের কর্মকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি। আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবি (স.) বলেন, ‘যে শোকে গালে চপেটাঘাত করে, জামার অংশবিশেষ ছিঁড়ে ফেলে এবং জাহিলি যুগের মতো চিত্কার করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (বুখারি, হাদিস :১২৩৫; মুসলিম, হাদিস :২৯৬)

 

 

স্বামী মারা গেলে স্ত্রীর শোক পালন ও অন্যান্য দায়িত্ব সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা স্ত্রী রেখে মৃত্যুমুখে পতিত হয়, তাদের স্ত্রীরা চার মাস ১০ দিন প্রতীক্ষায় থাকবে। যখন তারা তাদের ইদ্দতকাল পূর্ণ করবে তখন যথাবিধি নিজেদের জন্য যা করবে তাতে তোমাদের কোনো গুনাহ নেই। তোমরা যা করো আল্লাহ সে বিষয়ে সবিশেষ অবহিত।’ (সুরা বাকারা, আয়াত :২৩৪)। শোকার্ত মানুষকে সান্ত্বনা দেওয়া, সমবেদনা জানানো, যথাসাধ্য খোঁজখবর নেওয়া ও সহযোগিতা করা ইসলামের অন্যতম মানবীয় সদাচরণ। রসুল (স.) বলেন, ‘সন্তানহারা মাকে যে সান্ত্বনা দেয় জান্নাতে তাকে বিশেষ পোশাক পরানো হবে।’ (তিরমিজি, হাদিস :১০৭৬) নবিজি আরো বলেন, ‘স্বামীহারা নারী ও মিসকিনের জন্য খাদ্য জোগাড়ে চেষ্টারত ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদকারীর মতো অথবা রাতে নামাজে দণ্ডায়মান ও দিনে রোজা পালনকারীর মতো।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৩৫৩) । প্রিয়জনের মৃত্যুশোক স্মৃতি হয়ে রয়ে যায়। মাঝে মাঝে মনের কোঠায় ভেসে উঠে মনকে ব্যথিত করে। সে ক্ষেত্রে আবারও ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ বলে আল্লাহর দিকে ধাবিত হতে হবে। প্রিয়জনের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করতে হবে। ইস্তিগফার করতে হবে। সুযোগমতো কবর জিয়ারত করতে হবে।

   সৌজন্যে: ইত্তেফাক। লেখক: ড. এস এম জাহাঙ্গীর আলম, বীর মুক্তিযোদ্ধা, পরিচালক, বিএসসিএল ও ইসলামি গবেষক


মন্তব্য লিখুন


সম্পাদক ও প্রকাশক: শাহীনা আজমীন ।। স্বত্ব © বরিশাল নিউজ ২০২৪

Developed By NextBarisal