বরিশাল নিউজ
প্রকাশ : ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:১২ পিএম আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:৫০ পিএম
বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট এ কেএম জাহাঙ্গীরের বহিষ্কার দাবি করেছে একই কমিটির একাংশসহ সিটি মেয়র ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী সমর্থক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। তারা নতুর কমিটি গঠনেরও দাবি তোলেন।
এই দাবিতে তাঁরা নগরীতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে। নগরীর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে শনিবার দুপুরের দিকে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সভাপতির বহিষ্কার দাবিতে স্লোগান ও প্ল্যাকার্ড হাতে জড়ো হন নেতাকর্মীরা। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মহানগর কমিটিরই সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম।
এই দাবিদারগণ সবাই মহানগর আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রক সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বিরোধী। তাঁরা মহানগর সভাপতি এ কেএম জাহাঙ্গীরকে সাদিকের ‘খয়ের খাঁ’ বলে আখ্যায়িত করেন।
সভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ নেতা এ্যাডভোকেট আনিস উদ্দিন শহীদ, এ্যাডভোকেট লস্কর নুরুল হক, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক নিজামুল ইসলাম নিজাম, যুগ্ম আহ্বায়ক মাহামুদুল হক খান মামুনসহ আরো অনেকে।
সমাবেশে তাঁরা জাহাঙ্গীরের বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন। তাঁরা সভাপতির অপসারণসহ কমিটি ভেঙে দেওয়া এবং বর্তমান সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত আবুল খায়ের আব্দুল্লাহকে প্রধান করে নতুন কমিটি ঘোষণারও দাবি জানান।
মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য অ্যাডভোকেট আনিচ উদ্দিন শহীদ বলেন, তাঁর মতো নৌকার বিরুদ্ধাচরণ ব্যক্তির হাতে মহানগর আওয়ামী লীগ নিরাপদ নয়।
জাহিদ ফারুকের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মীর আমিন উদ্দিন পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, জাহাঙ্গীর কোথায় ধান বুনেছেন? সবাইকে তিনি বহিরাগত বলছেন, কিন্তু তাঁর ভিটামাটি কোথায়? কোন আন্দোলনে তিনি কী ভূমিকা রেখেছেন, বরিশালবাসী জানে। কারও নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, জাহাঙ্গীর একটি পরিবারের ব্যক্তিক বন্দনা করে দলে পদ পেয়েছেন। এ জন্যই প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করার দুঃসাহস দেখাতে পারছেন। অন্তর্ঘাতমূলক বক্তব্য দেওয়ার জন্য তাঁকে বহিষ্কারের পাশাপাশি আইনের আওতায় আনা উচিত বলেন দলের এই নেতা।
মহানগর যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক মাহমুদুল হক খান মামুন বলেছেন, গত ১২ জুনের সিটি নির্বাচন হয়েছিল ইভিএম পদ্ধতিতে। সে নির্বাচন সম্পর্কে নগর সভাপতি জাহাঙ্গীর প্রশ্ন তুলেছেন। জাতীয় নির্বাচনেও প্রশাসন দিয়ে ব্যালট ভরার কথা বলে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
মহানগর অওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আফজালুল করীম গনমাধ্যম কর্মীদেরকে বলেন, মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ একজন দামি ব্যক্তি। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে তাঁর ডামি প্রার্থী হওয়া মানায় না।
মহানগর সভাপতি একেএম জাহাঙ্গীরের উপর এত ক্ষোভ কেন?
গত ২৮ নভেম্বর শান্তি সমাবেশ করে মহানগর আওয়ামী লীগ। সেই সমাবেশে গত ১২ জুনের সিটি নির্বাচনকে ইঙ্গিত করে এ কে এম জাহাঙ্গীর বলেছিলেন,‘সিটি নির্বাচনে আমাদের গাধা বানানো হয়েছে। আমাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করেছে। ওই নির্বাচনের মতো খালি মাঠে গোল দিতে দেব না।’
পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুককে ইঙ্গিত করে সভাপতি জাহাঙ্গীর বলেছেন, ‘ফসল রোপণ করি আমরা। রোপণ থেকে পাকা পর্যন্ত আমরা পরিশ্রম করে যাই। আর সেই ফসল আরেকজন এসে কেটে নিয়ে ঘরে তুলবে, আমরা তা হতে দেব না। আমাদের কষ্টার্জিত ফসল আমাদের ঘরে রাখতে চাই। আমরা কোনো বহিরাগতকে আর সুযোগ দেব না। এবার খেলা হবে । ভোটে জালিয়াতির সুযোগ, প্রশাসনকে ব্যবহার করে ভোটের বাক্স ভরবেন সেই সুযোগ দেওয়া হবে না।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘বিরোধী দলের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামে বরিশালে থাকা সত্ত্বেও তাঁকে আমরা কোনো দিন পাইনি। নির্বাচিত হয়ে কোনো মানুষের কাছে যাননি। আমরা এই লোককে আর চাই না। যিনি জনগণের সঙ্গে থাকেন, জনগণের সঙ্গে ঘুমান, জনগণের সুখ-দুঃখে পাশে থাকেন, সেই সাদিক আবদুল্লাহকে আমরা চাই ।‘
এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল সদর আসনে নৌকার মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে জাহিদ ফারুক শামিমকে। এই আসনে মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন সিটি নির্বাচনে মনোনয়ন না পাওয়া সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। কিন্তু দল এবারও তাকে মনোনয়ন দেয়নি। তবে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়াতে কৌশল হিসেবে দলীয় নেতাদের স্বতন্ত্রভাবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার কথা বলেন। এতে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পেয়ে যান সাদিক আবদুল্লাহ। এমন সিদ্ধান্তের পর সাদিক আবদুল্লাহর পক্ষে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তাঁর মনোনয়নপত্র জমা দেন তাঁর অনুসারীরা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: শাহীনা আজমীন ।। স্বত্ব © বরিশাল নিউজ ২০২৪
Developed By NextBarisal
মন্তব্য লিখুন