Advertise top
বরিশাল

কবি জীবনানন্দ দাশের জন্মবার্ষিকীতে বরিশালে নানা আয়োজন

বরিশাল নিউজ

প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:৩৫ পিএম    

কবি জীবনানন্দ দাশের জন্মবার্ষিকীতে বরিশালে নানা আয়োজন
রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ'র ১২৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিএম কলেজ মাঠে জীবনানন্দ মেলার উদ্বোধন। ছবি: বরিশাল নিউজ

কবি জীবনানন্দ দাশের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী তাঁর কর্মস্থল ব্রজমোহন কলেজে আয়োজন করা হয়েছে তিনদিনব্যাপী জীবনানন্দ মেলা। আজ   সোমবার সকালে মেলার উদ্বোধন করেন কলেজ অধ্যক্ষ তাজুল ইসলাম।

 

আয়োজনের মধ্যে রয়েছে, কবির প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা সভা-আবৃত্তি, চিত্র প্রদর্শনী ছাড়াও তিন দিনের জীবনানন্দ মেলা।

 

সোমবার সকাল ৯টায় নগরের জীবনানন্দ দাশ সড়কে কবির জন্মভিটায় স্থাপিত জীবনানন্দ দাশ স্মৃতি মিলনায়তন ও পাঠাগারে কবির প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন প্রগতি লেখক সংঘ ও বরিশালের বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ। এ সময় আলোচনা সভা, আবৃত্তি পরিবেশিত হয়।

 

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, রবীন্দ্র-উত্তর বাংলা কবিতায় জীবনানন্দই জুড়ে বসেছেন। নির্জনতার কবি হিসেবে খ্যাত হলেও জীবনানন্দ দাশ একজন কাল ও ইতিহাস-সচেতন কবি ছিলেন। আধুনিক কাব্যকলার বিচিত্র তত্ত্ব প্রয়োগ ও শব্দ নিরীক্ষার ক্ষেত্রে তাঁর অনন্যতা বিস্ময়কর। বিশেষত কবিতার উপমা প্রয়োগে জীবনানন্দের নৈপুণ্য তুলনাহীন। কবিতাকে তিনি মুক্ত আঙ্গিকে উত্তীর্ণ করে গদ্যের স্পন্দন যুক্ত করেছিলেন। এ ধারা পরবর্তী কবিদের প্রবলভাবে প্রভাবিত করেছে। তাঁদের জীবনবোধকে নাড়া দিয়েছে।

 

কবির কর্মস্থল বরিশালের ব্রজমোহন কলেজে এ উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী জীবনানন্দ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। উত্তরণ সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় এই মেলার উদ্বোধন করে কলেজের অধ্যক্ষ মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা গর্বিত বাংলা ভাষার অন্যতম জনপ্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশ আমাদের এই কলেজেরই ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ছিলেন।’

 

 

জীবনানন্দ দাশের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বরিশাল শিল্পকলা একাডেমির তৃতীয় তলার আর্ট গ্যালারিতে একদিনের চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।

 

জীবনানন্দ মেলা উদ্‌যাপন পর্ষদের সদস্যসচিব জায়েদ ইবনে হারুন জানান, ‍তিন দিনের এই মেলা চলবে ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। মেলায় ৫৫টি স্টলে বই ও অন্যান্য সামগ্রী পাওয়া যাবে। মেলার অংশ হিসেবে চারটি অধিবেশনে বিভিন্ন অনুষ্ঠান হবে। প্রথমে কবির প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হবে, এরপর থাকবে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

 

জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে চারুকলা বরিশাল ‘জীবনানন্দ দাশের প্রকৃতি’ শীর্ষক, একদিনের চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করে। সোমবার বেলা ১১টায় নগরী বান্দরোডে শিল্পকলা একাডেমির তৃতীয় তলার আর্ট গ্যালারিতে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন কবি অরূপ তালুকদার ও শিল্পী জগন্নাথ দে। প্রদর্শনীতে জল রং, পেনসিল, ও চারকোলে অঙ্কিত ২৫ জন শিল্পীর ৩৪টি চিত্রকর্ম উপস্থাপিত হয়েছে। প্রদর্শনের মুখ্য সংগঠক শিল্পী তাপস কর্মকার বলেন, এটি কবির প্রতি চিত্রশিল্পীদের শ্রদ্ধার্ঘ্য। কবি বেঁচে থাকবেন শিল্পীদের অন্তরে।

 

কবির জন্মদিবস উপলক্ষে প্রগতি লেখক সংঘ কবি জীবনানন্দ দাশ স্মৃতি মিলনায়তন ও পাঠাগারে আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, বাংলা ভাষার প্রবাদপ্রতিম এই কবির জন্ম শহর বরিশাল। এটি অবশ্যই অমূল্য গৌরবের। এই বাংলায় ঘুরে বেড়িয়েই জীবনানন্দ চিত্রিত করেছেন বাংলার রূপ, লাবণ্য, প্রকৃতি-ঋতু এবং অপর বিশ্বকে।

 

কবি জীবনানন্দ দাশের জন্ম বরিশালে। এখানেই তিনি বেড়ে উঠেছেন, শৈশব, কৈশোর, যৌবনের বড় একটা অংশ অতিবাহিত করেছেন। পেশাগত জীবনও কেটেছে বেশ কিছুটা সময়। তাঁর সৃষ্টিকর্মের এক বিশাল অংশজুড়ে আছে বরিশালের প্রকৃতি ও সৌন্দর্য।

 

অনুষ্ঠানে আইনজীবী হিরন কুমার দাস বলেন, কবির বাবা সত্যানন্দ দাশ ছিলেন বরিশাল ব্রজমোহন স্কুলের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক। কবি নিজেও ব্রজমোহন কলেজে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত ইংরেজি ভাষার শিক্ষক ছিলেন। বরিশালের প্রকৃতি ঘিরেই কবির অজস্র রচনা ও সাহিত্যকর্ম দেখা যায়। এ জন্য কবির এই সাহিত্যকর্মের গবেষণা, স্মৃতি সংরক্ষণ করা সবার দায়িত্ব।

 

আলোচনা শেষে কবির কবিতা আবৃত্তি, স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন অপূর্ব গৌতম, হাসিনা বেগম বেগম, সুজয় সেন, সুভাস দাস।

 

জীবনানন্দ দাশের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কবির জন্মভিটায় জীবনানন্দ মিলনায়তন ও গণগ্রন্থাগারে আলোচনা সভার আয়োজন করে প্রগতি লেখক সংঘ।

 

জীবনানন্দ দাশ ১৮৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ‘ব্রহ্মবাদী’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। তাঁর মা কুসুমকুমারী দাশও একজন কবি ছিলেন। জীবনানন্দের বিখ্যাত গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে ঝরা পালক, ধূসর পাণ্ডুলিপি, বনলতা সেন, মহাপৃথিবী, সাতটি তারার তিমির, জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা ও রূপসী বাংলা। তিনি ২১টি উপন্যাস এবং ১২৬টি ছোট গল্পও রচনা করেছিলেন। বাংলা কবিতার এই প্রবাদপ্রতিম কবি ১৯৫৫ সালের ১৪ অক্টোবর কলকাতায় ট্রাম দুর্ঘটনায় আহত হন এবং ২২ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর সাহিত্যকর্ম আজও বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অন্যতম সেরা সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয়।


 


মন্তব্য লিখুন


Ish Brand

সর্বশেষ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাহীনা আজমীন ।। স্বত্ব © বরিশাল নিউজ ২০২৫

Developed By NextBarisal