বরিশাল নিউজ
প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৮ পিএম
বরিশালে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় শিক্ষার্থী পরিচয়ে বিআরটিসির টিকিট বিক্রির একটি কাউন্টার দখলে নিয়েছে একদল তরুণ। গত মঙ্গলবার রাতে কাউন্টারটির বিআরটিসি মনোনীত প্রতিনিধি মহানগর শ্রমিক লীগ কর্মী জাহিদুল ইসলামকে পিটিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে তারা। এর পর বুধবার সকাল থেকে ওই তরুণরা কাউন্টারটি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে এক মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামির তালিকায় জাহিদকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তিনি শ্রমিক লীগ করতেন বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।
জানা গেছে, কাউন্টার দখলের ঘটনার নেতৃত্ব দেন সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের শিক্ষার্থী শাওন খান। তিনি নিজেকে কলেজ ছাত্রদলের কর্মী দাবি করলেও সংগঠনে তার কোনো পদপদবি নেই বলে স্বীকার করেন।
অন্যদিকে হামলার শিকার জাহিদুল নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালসংলগ্ন বিআরটিসি ডিপোর প্রবেশমুখে টিকিট কাউন্টারের প্রতিনিধি ছিলেন। বিআরটিসির দূরপাল্লা রুটের বাসের টিকিট বিক্রি হয় এ কাউন্টারে। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর জাহিদুল আত্মগোপনে ছিলেন। নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে ১ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাবেক সভাপতি গোলাম কবির বাবলার তত্ত্বাবধানে এক মাস আগে ফের কাউন্টারে ফেরেন জাহিদুল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে শাওনের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক তরুণ নিজেদের ছাত্র পরিচয় দিয়ে বিআরটিসি ডিপোতে যায়। তারা জাহিদুলকে কাউন্টার থেকে ডেকে সংলগ্ন একটি পেট্রোল পাম্পে নিয়ে যায়। এ সময় ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের মিছিলে জাহিদুলের অংশগ্রহণের ছবি দেখিয়ে এর কারণ জানতে চায়। ওই তরুণদের অভিযোগ, আন্দোলনকারীদের ওপর হামলাকারীদের মধ্যে জাহিদুলও ছিলেন। এ নিয়ে জাহিদুলের সঙ্গে শাওনসহ তার সহযোগীদের বাদানুবাদ হয় হয়। এক পর্যায়ে শাওনসহ তার সহযোগীরা জাহিদুলকে বেদম মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেন। পুরো ঘটনার ভিডিও এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
জাহিদুলের ভাই জাফর হোসেন জানান, মারধরে জাহিদুলের দুটি দাঁত পড়ে গেছে। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়। পরে তাকে আদালতে পাঠানো হলে বিচারক কারাগারে পাঠান।
ঘটনার বিষয়ে শাওন খান বলেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে ছাত্রদের এক দফা আন্দোলন চলাকালে হামলাকারীদের মধ্যে জাহিদুলও ছিলেন। এতে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার রাতে তাকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। কাউন্টারে এখন তাদের প্রতিনিধি থাকার কথা স্বীকার করেন শাওন।
বিআরটিসির বরিশাল ডিপোর ব্যবস্থাপক জামিল হোসেন বলেন, জাহিদুল গত চার বছর বিআরটিসির একটি টিকিট কাউন্টারের প্রতিনিধি ছিলেন। বিক্রীত টিকিটের ১০ ভাগ কমিশন পেতেন তিনি। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর জাহিদুল দুই মাস আত্মগোপনে ছিলেন। তখন বিআরটিসির নিজস্ব জনবল দিয়ে কাউন্টারটি চালাতাম। এক মাস আগে জনৈক বাবলাসহ প্রায় ২০ জন আমার কাছে এসে কাউন্টারের প্রতিনিধিত্ব দাবি করেন। তাদের জানানো হয়, সেটি জাহিদুলের নামে বরাদ্দ হওয়া। তখন তারা বলেন, তাদের নেতৃত্বে জাহিদুলই কাউন্টারে বসবেন। এর পর থেকে জাহিদুল কাউন্টারটি চালাচ্ছিলেন। জাহিদুল গ্রেপ্তার হওয়ায় বুধবার থেকে বিআরটিসি কর্মচারীরা কাউন্টার চালাচ্ছেন। তবে ছাত্রদের প্রতিনিধিরাও সেখানে আছেন।
ঘটনা প্রসঙ্গে ১ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাবেক সভাপতি গোলাম কবির বাবলা বলেন, জাহিদুল আমার বন্ধু। জাহিদুল আমাকে সহযোগিতা করতেন। মঙ্গলবার রাতে জাহিদুলকে মারধরের হাত থেকে বাঁচাতে কাউন্টারটি তার বলে দাবি করেছিলাম।
সূত্র: সমকাল
সম্পাদক ও প্রকাশক: শাহীনা আজমীন ।। স্বত্ব © বরিশাল নিউজ ২০২৪
Developed By NextBarisal
মন্তব্য লিখুন