বরিশাল নিউজ
প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:২৩ পিএম আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৩১ পিএম
বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীর স্বজনদের হামলার প্রতিবাদে কর্মবিরতি পালন করছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
আজ শনিবার দুপুর থেকে শুরু হওয়া কর্মবিরতি শেষে কাজে ফিরে যাওযার জন্য চার দফা দাবি জানিয়েছেন তারা। তাদের দাবির প্রতি একাত্মতা জানিয়ে মধ্যম সারির চিকিৎসকেরাও কর্মবিরতিতে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে মো. জুনায়েদ (৮) নামের এক শিশু মারা যায়। শিশুটি নিউমোনিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে ২৪ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হলে সাথী আক্তার নামে শিশুটির এক স্বজন চিকিৎসক ও নার্সদের গালিগালাজ ও লাঞ্ছিত করেন। এ ঘটনায় হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার আবুল কালাম বাদী হয়ে গতকাল রাতে একটি মামলা করেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ দুপুর ১২টা থেকে ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা কর্মবিরতি শুরু করেন।
বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে সকালে বৈঠকে বসেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের তৃতীয় তলায় ওই বৈঠকে হাসপাতালের পরিচালক ছাড়াও সেনাবাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, মহানগর পুলিশের কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসনের একজন প্রতিনিধি অংশ নেন। বৈঠকে ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা চার দফা দাবি তুলে ধরে বাস্তবায়নের দাবি জানান। এ সময় হাসপাতালের পরিচালক সাইফুল ইসলাম দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন এবং প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে বাস্তবায়নের কথা জানান। কিন্তু ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা পরিচালকের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়ন কিংবা এ–সংক্রান্ত লিখিত চান। লিখিত না দেওয়ায় ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা কর্মবিরতি শুরু করেন।
ইন্টার্ন চিকিৎসকদের চার দফা দাবির মধ্যে রয়েছে অপরাধীদের আজকের মধ্যে গ্রেপ্তার, হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তায় আনসার সদস্যদের সংখ্যা তিন গুণ বৃদ্ধি ও কমপক্ষে ৩০ জন পুলিশ সদস্য রাখা; শয্যার অতিরিক্ত রোগী ভর্তি বন্ধ করা এবং একজন রোগীর সঙ্গে একজন স্বজন রাখা ও চিকিৎসক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা।
আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দাবি পূরণ না করলে রবিবার আরও কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা।
ইন্টার্ন চিকিৎসক মাহিউর রহমান ও নূরে আলম বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে প্রায়ই চিকিৎসক-নার্সরা হামলার শিকার হচ্ছেন। প্রতিবার তাঁরা সমাধান চেয়েছেন। কিন্তু বারবার পরিচালক তাঁদের আশ্বাস দিয়েছেন। পরে আর দাবি বাস্তবায়িত হয়নি। এ জন্য তাঁরা পরিচালকের কাছে আজই দাবি বাস্তবায়ন অথবা লিখিত চেয়েছেন। কিন্তু তিনি দিতে চাননি। বাধ্য হয়ে তাঁরা কর্মবিরতিতে গেছেন। তাঁরা বলেন, ‘আমরাও চাই না সাধারণ ও গরিব রোগীরা সেবাবঞ্চিত হোক। কিন্তু আমরা তো পড়াশোনা করতে এসে মানুষের সেবা দিচ্ছি। সেখানে প্রতিনিয়ত হামলা হলে কি সেবা দেওয়া সম্ভব?’
এদিকে ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা কর্মবিরতিতে যাওয়ায় হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি হওয়া রোগীরা তাৎক্ষণিক সেবা পাচ্ছেন না। এতে রোগীদের ভোগান্তি বেড়েছে।
হাসপাতালের উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামান শাহিন সেবা ব্যাহতের বিষয়ে বলেন, ‘হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সেবা চলছে। হাসপাতাল তো বন্ধ রাখা যাবে না। এ জন্য আমরা হাসপাতালের প্রতিটি বিভাগের প্রধানদের চিঠি দিয়ে নির্দেশনা দিয়েছি যাতে মিড-লেভেলের চিকিৎসকদের দিয়ে সেবা অব্যাহত রাখা হয়।আমরা চেষ্টা করছি, যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা কাজে ফিরে আসেন।’
সম্পাদক ও প্রকাশক: শাহীনা আজমীন ।। স্বত্ব © বরিশাল নিউজ ২০২৪
Developed By NextBarisal
মন্তব্য লিখুন