Advertise top
ধর্ম

কুরআন হাদিসের আলোকে সাংবাদিকতা

বরিশাল নিউজ ডেস্ক

প্রকাশ : ০৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০৩:০৮ পিএম    

কুরআন হাদিসের আলোকে সাংবাদিকতা

বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় সংবাদ মাধ্যমকে আমরা বিভিন্ন বিশেষণে বিশেষায়িত করতে পারি। যেমন ‘কালের দর্পণ’, ‘গণমানুষের কণ্ঠ’ ইত্যাদি।

 

সংবাদ বলতে মুদ্রণজগৎ, প্রচার মাধ্যম, সম্প্রচার কেন্দ্র, অন্তর্জাল বা গণমাধ্যমের পেশকৃত বর্তমান ঘটনার পূর্ণ তথ্যের সমষ্টি। যা যোগাযোগের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। তার গুরুত্ব ও প্রয়োজন অনস্বীকার্য। তবে এসব প্রক্রিয়ায় অনেক সময় মানুষ কুপ্রবৃত্তির শিকার হতে দেখা যায়। আর ইসলামে সংবাদ পরিবেশন করার পদ্ধতি হলো, মনের কুপ্রবৃত্তির শিকার না হয়ে মানবকল্যাণে সত্যনিষ্ঠ সংবাদ পৌঁছে দেওয়া। তবে গতানুগতিক সাংবাদিকতার পরিবর্তে ইসলামের দেওয়া সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে সংবাদ পরিবেশন বা সাংবাদিকতা করা জরুরি।

 

সাংবাদিকতার মূল ভিত্তি দুটি বিষয়ের ওপর। এক. বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন। দুই. মিথ্যা ও অসত্য তথ্যের ভিত্তিতে সংবাদ পরিবেশন প্রতিরোধ করা। এ ভিত্তিদ্বয়ের অনুকরণে সাংবাকিতা করলে তা আল্লাহর দিকে মানুষকে আহ্বান করার অন্তর্ভুক্ত হয়ে ইবাদতে পরিণত হবে। তবে প্রায়োগিক ও ব্যবহারিক ক্ষেত্রে ইসলামে সাংবাদিকতার আরও কিছু বৈশিষ্ট্য ও নীতিমালা রয়েছে।

 

ইসলামে সাংবাদিকতা একটি আমানত। আর এ আমানত হচ্ছে, যে কোনো তথ্য ও সংবাদকে বস্তুনিষ্ঠুভাবে গণমাধ্যমে তুলে ধরা। নিজ স্বার্থ কিংবা দল-মতের রং মাখিয়ে সংবাদকে উপস্থাপন করা কিছুতেই ইসলাম সমর্থিত নয়। এ ক্ষেত্রে আমাদের জন্য জরুরি হলো, কোনোরূপ সংযোজন-বিয়োজন ছাড়াই সংবাদ পরিবেশন করা এবং সংবাদের নিছক সত্যকেই তুলে ধরা। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন-হে ইমানদাররা! আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল [সূরা আহজাব : ৭০]। অর্থাৎ সংবাদ হবে সত্য, তাতে মিথ্যার নাম-গন্ধ থাকবে না। সঠিক হবে, যাতে ভুলের আভাস থাকবে না। গাম্ভীর্যপূর্ণ হবে, নামমাত্রও স্থূলতা থাকবে না।

 

সংবাদের সত্যতা যাচাইয়ে কোনো ধর্ম, আদর্শ, মতবাদ বা সভ্যতা মানুষকে মিথ্যাবাদী হতে শেখায় না। ইসলামও এর ব্যতিক্রম নয়। ইসলামে মিথ্যা বলা মহাপাপ বা কবিরা গোনাহ। তাই সংবাদের তথ্য যাচাই ও সত্যতা নিরূপণ করা সাংবাদিকের অপরিহার্য কর্তব্য।

 

হজরত আবদুর রহমান ইবনে আবু বকরা (রা.) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন-আমরা রাসূল (সা.)-এর কাছে ছিলাম তখন রাসূল (সা.) বললেন, আমি কি তোমাদের কবিরা গোনাহ সম্পর্কে অবহিত করব না? কথাটি তিনি তিনবার বলেছেন। [অতঃপর তিনি বললেন] আল্লাহর সঙ্গে কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করা এবং মা-বাবার অবাধ্য হওয়া। আর মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া অথবা মিথ্যা বলা। রাসূল তখন হেলান ছেড়ে সোজা হয়ে বসে এ কথাগুলো বারবার বলতে লাগলেন। এমনকি আমরা মনে করলাম, হয়তো তিনি আর থামবেন না। [সহিহ মুসলিম শরিফ : বাব-বয়ানুল কাবাইর, হাদিস : ৮৭]।

 

আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন-হে মুমিনরা, যদি কোনো পাপাচারী তোমাদের কাছে কোনো খবর নিয়ে আসে, তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখবে। যাতে অজ্ঞতাবশত তোমরা কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতি সাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে যাতে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য তোমাদের অনুতপ্ত হতে না হয় [সূরা হুজরাত : ৬]। হজরত হাফস ইবনে আসিম (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন-যা শুনবে, তা-ই [যাচাই করা ছাড়া] বর্ণনা করা মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য যথেষ্ট। [সহিহ মুসলিম শরিফ, মুকাদ্দিমা : ৬]।

 

ধর্ম-বর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী, বিশেষ দেশ ও ভূখণ্ড নির্বিচারে সংবাদ পরিবেশন এবং সাংবাদিকতা করা ইসলামি দাওয়াতের একটি গুরত্বপূর্ণ অংশ। আর তা কিছুতেই কোনো নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর একার নয়। আল্লাহতায়ালা বলেন- [হে মানবজাতি] তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধর, বিচ্ছিন্ন হয়ো না [সূরা আলে ইমরান : ১১২]। কাজেই সব জাতি-গোত্র, শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়েই সংবাদ পরিবেশন করতে হবে।

 

এতে পক্ষপাতিত্ব বা বিশেষ কোনো সম্প্রদায়কে প্রাধান্য দেওয়ার সুযোগ নেই। সাংবাদিকরা পক্ষপাতিত্বকারী বা নতজানু হয়ে কাজ করলে গণমাধ্যমের কার্যকারিতাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। মূলত সত্য প্রকাশে আপসহীনতা এবং কোনো শক্তির কাছে মাথা নত না করা ও ভয়হীন সংবাদ পরিবেশন করাই একজন আদর্শ সাংবাদিকের অন্যতম কর্তব্য। আর ইসলামও সাংবাদিকের সত্য প্রকাশের অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে।

 

হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, (রা.) বলেন-অত্যাচারী শাসকের সামনে সত্য উচ্চারণ করাই উত্তম জিহাদ [তিরমিজি : ২৩২৯]। অন্য হাদিসে এসেছে, হজরত আবু যর গিফারি (রা.) বললেন, রাসূল (সা.) আমাকে বলেছেন-তুমি সত্য বলবে, যদিও তা তিক্ত হয়। [ইবনু হিব্বান : ২/৯৫]।

সূত্র: যুগান্তর, লেখক: উবায়দুল হক খান


 


মন্তব্য লিখুন


সম্পাদক ও প্রকাশক: শাহীনা আজমীন ।। স্বত্ব © বরিশাল নিউজ ২০২৪

Developed By NextBarisal