Advertise top
উদ্যোক্তা

নকশি কাঁথায় ভাগ্য বদল সেলিনা আক্তারের

শরীফ হোসাইন, ভোলা

প্রকাশ : ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫:৩৮ পিএম    

নকশি কাঁথায় ভাগ্য বদল সেলিনা আক্তারের
ভোলা সদর উপজেলার পৌর ‘গ্লামার জোন নকশি কাঁথা’ র উদ্যাক্তা সেলিনা আক্তার। ছবি: বরিশাল নিউজ

নকশি কাঁথায় ভাগ্য বদল করেছেন ভোলার এক অদম্য নারী। মাত্র ২০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ঘরে বসেই নকশি কাঁথার ব্যবসা শুরু করেছিলেন তিনি।  ৬ বছরের মধ্যেই নিজে সাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি অন্তত ৫০ জন অসহায় বেকার নারীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করেছেন সেলিনা আক্তার।

 

ভোলা সদর উপজেলার পৌর ৮নং ওয়ার্ডের কাঠালি এলাকার বেপারি বাড়ীর বাসিন্দা মো. আলমের স্ত্রী হচ্ছেন এই সেলিনা আক্তার। তিনি গড়ে তুলেছেন ‘গ্লামার জোন নকশি কাঁথা’ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যে তার কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ জয়িতার সম্মাননা।

 

জানা গেছে, পারিবারিকভাবে বিয়ের পর উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন সেলিনা আক্তার। সংসার জীবনে স্বামী ও দুই মেয়েকে নিয়ে প্রথম দিকে ভালোভাবে তাদের সংসার চললেও এক সময় তার সংসারে আর্থিক টানাপোড়েন শুরু হয়। বেরিয়ে পড়েন চাকরির খোঁজে। কিন্তু চাকরি যেন সোনার হরিন।  এরপর ইউটিউবে নকশি কাঁথা ডিজাইন ও সেলাই দেখেন এবং সিদ্ধান্ত নেন নিজেই নকশি কাঁথার ব্যবসা করবেন। বড় ভাইয়ের থেকে ২০ হাজার টাকা ধার নিয়ে নেমে পড়েন ব্যবসায়। এরপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।

 

নিজের ইচ্ছাশক্তি এবং একাগ্রতায় নকশি কাঁথা তৈরি করে আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠেছেন এ নারী। ভোলায় মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে ২০২৩ সালে পেয়েছেন ভোলা সদর উপজেলার শ্রেষ্ঠ জয়িতার সম্মাননা। বর্তমানে অনলাইন ও অফলাইন দুইভাবেই কাঁথা বিক্রি করছেন। চাহিদাও রয়েছে বেশ। ৩শ’ টাকা থেকে শুরু করে ১৫ হাজার টাকা দামের নকশি কাঁথা রয়েছে তার কাছে।

 


 সেলিনা আক্তার ‘গ্লামার জোন নকশি কাঁথা’ প্রতিষ্ঠান। ছবি: বরিশাল নিউজ


 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন নারী এসেছেন তার কাছে নকশি কাঁথা ডিজাইন ও সেলাই শিখতে। আবার কেউ কেউ এসেছেন প্রতিদিনের মতো কাজ করতে। সেলিনা আক্তার নিজেই তাদের কাজ তদারকি করছেন আবার কাঁথায় ডিজাইন করছেন। বর্তমানে ব্যবসা ও সংসার নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন এ জয়িতা।

 

সেলিনা আক্তার বলেন, ছোটবেলা থেকেই সেলাই ও আঁকার প্রতি ঝোঁক ছিল। সংসার জীবনে আমার মেয়েরা পড়াশোনা শুরু করার পর নানান কারণে সংসারের পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যায়। তখন চিন্তা করলাম আমার কিছু করার দরকার। প্রথমে মনে করেছিলাম মেয়েরা চাকরি ছাড়া টাকা উপার্জন করতে পারে না। কয়েক বছর চাকরির পেছনে ছুটেও চাকরি পেলাম না। চিন্তা করলাম চাকরি ছাড়া কিছু করা যায় কিনা। হঠাৎ একদিন ইউটিউবে দেখি নকশি কাঁথার ব্যবসা করে অনেকে আয় করছে। ২০ হাজার টাকার সুতা-কাপড় কিনে ব্যবসায় নেমে পড়লাম। এরপর থেকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি।

 

তিনি আরো বলেন, নকশি কাঁথা বিক্রির অর্থ দিয়ে দুই মেয়েকে পড়াশোনা করিয়েছি। এক মেয়েকে ধুমধাম করে বিয়ে দিয়েছি। একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দিয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ আমার সংসারও ভালো চলছে। এছাড়া আমার প্রতিষ্ঠানে ৫০ থেকে ৬০ জন নারী কাজ করে। তারা অনেকে নিজেরাও নিজেদের মতো ঘরে বসে কাজ করে উপার্জন করছেন। নারীদের ঘরে বসে না থেকে কিছু করার পরামর্শ এ উদ্যোক্তা।

 

সেলিনা আক্তারের কলেজ পড়ুয়া মেয়ে ইসরাত জাহান মিম বলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি আম্মুকে নকশি কাঁথার কাজে সাহায্য করি। আমি এখন ডিজাইন ও সেলাইয়ের কাজ করতে পারি। এতে আম্মুর অনেক সাহায্য হয়।

 

ভোলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ইকবাল হোসেন বলেন, সেলিনা আক্তার সফল ও সংগ্রামী নারী। তিনি তার সংগ্রামের মাধ্যমে নিজে সাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি ভোলার অসহায়-বিধবা নারীদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাকরেছেন। তার যে কোনো প্রয়োজনে আমরা তার পাশে আছি। ২০২৩ সালে সেলিনা আক্তারকে অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী হিসেবে শ্রেষ্ঠ জয়িতার সম্মাননা পেয়েছেন। ভোলার নারীদের সাবলম্বী করতে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর নানা পদক্ষেপের কথাও জানান তিনি।


 


মন্তব্য লিখুন


সম্পাদক ও প্রকাশক: শাহীনা আজমীন ।। স্বত্ব © বরিশাল নিউজ ২০২৫

Developed By NextBarisal