Advertise top
বরিশাল

বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ড: মৃতদের ৪ জন ভোলার

বরিশাল নিউজ, ভোলা

প্রকাশ : ০২ মার্চ ২০২৪, ০৮:৫৫ পিএম     আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২৪, ০৮:৫৬ পিএম

বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ড:  মৃতদের ৪ জন ভোলার
অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারানো ভোলার ৪ জন। ছবি: বরিশাল নিউজ

 ঢাকার বেইলি রোডের রেস্তোরায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জীবন প্রদীপ নিভে গেল ভোলার চার জনের। নিহতদের খবর ভোলায় পৌঁছার পরপরই পরিবারগুলোতে নেমে আসে শোকের মাতম। এরা সবাই বৃহস্পতিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে ওই ভবনের কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছিলো।

 


অগ্নিকাণ্ডে নিহত ভোলার ৪ জনের মধ্যে ভোলা সদরের ২ যুবক এবং দৌলতখানের ২ জন নারী রয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ভোলা সদরের বিএভিএস রোড এলাকার এমদাদুল হক জুনায়েদ, বন্ধুদের নিয়ে কাচ্চি খেতে গিয়ে আগুনে পুড়ে নিহত হন । শুক্রবার, ১ মার্চ রাতে খলিফাপট্টি ফেরদাউস জামে মসজিদে জানাজা শেষে শহরের কালিবাড়ি রোড বিল্লাহ মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।


 জুনায়েদ পরিবারের সাথে ঢাকায় বসবাস করতেন। তিনি স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির এলএলবি’র দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। বাবা মাইনুল হক হারুনের চাকুরির সুবাদে দুই বোন ও মাকে নিয়ে ঢাকায় থাকতেন জুনায়েদ। বাবা-মা, ছেলেকে আইনজীবী বানাতে এলএলবিতে ভর্তি করে দেন।

 

বন্ধুদের সাথে পছন্দের কাচ্চি খেতে গিয়ে  প্রাণ হারান জুনায়েদ।  তার  ৫ বন্ধুর মধ্যে ৩ জন জীবিত বের হলেও ২ জনকে প্রাণ দিতে হয়েছে বলে জানান তার বন্ধুরা। তার মরদেহ শুক্রবার, ১ মার্চ সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে ভোলায় আনা হলে পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধুদের মধ্যে নেমে আসে শোকের মাতম। এলাকায়ও শোকের ছায়া নেমে আসে। 


অপরজন ভোলা সদরের উত্তর দিঘলদী ইউনিয়নের চর কুমারিয়া ১নং ওয়ার্ডের ফরাজী বাড়ির সিরাজ ফরাজীর ছেলে নয়ন (২৩) । একই ঘটনায় তিনিও প্রাণ হারান। তিনি ওই দিন সকালেই  ‘কাচ্চি ভাই’ রেস্টুরেন্টে চাকরিতে যোগ দেন। ১২ ঘণ্টায় মাথায় ভয়াবহ আগুনে পুড়ে জীবনের প্রথম কর্মস্থল থেকে ফিরলেন লাশ হয়ে।

 


আর্থিক সংকটে থাকা কৃষক বাবাকে সহযোগিতা করতেই ঢাকায় গিয়েছিলেন ভোলা সদর উপজেলার চরকুমারিয়া গ্রামের যুবক নয়ন। তার বাড়ি ফেরা হলো লাশ হয়ে। বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডে আদরের ছোট ছেলেকে হারিয়ে প্রলাপ করছেন মা, আর ছেলে হারিয়ে নির্বাক বাবা। শুক্রবার, ১ মার্চ দুপুরে নয়নের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, আদরের ছোট ছেলে মো. নয়নের ছবি নিয়ে বিলাপ করছেন মা নাজমা বেগম। অগ্নিকাণ্ডের প্রায় ৯ ঘণ্টা পর শুক্রবার সকালে স্থানীয় চেয়ারম্যানের লিয়াকত হোসেন মনছুর এর মাধ্যমে ছেলের মৃত্যুর খবর পান নাজমা ও তার পরিবার। সেই থেকেই চলছে তার বিলাপ। ছেলের মৃত্যুর খবরে নির্বাক মো. সিরাজ ফরাজী। ছেলের এমন অপ্রত্যাশিত মৃত্যুর খবর কোনোভাবেই মানতে পারছেন না তিনি। শুক্রবার সকালে ছেলের মৃত্যুর খবর আসার পর থেকেই নির্বাক বসে আছেন। খবর পেয়ে বাড়িতে ছুটে এসেছেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা।

 


নয়নের স্বজনরা জানান, নয়ন (১৯) নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। চাকরির সন্ধানে সোমবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকায় যান। বাবুর্চির সহকারী হিসেবে বৃহস্পতিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টায় বেইলি রোডের ‘কাচ্চি ভাই’ রেস্টুরেন্টে যোগ দেন। ওই রাতের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যু হয় তার। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে শুক্রবার সকালে পরিবারের কাছে মৃত্যুর খবর আসে।


এদিকে নিহতের ভাই দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে মরদেহ শনাক্ত করেন।  কর্মস্থলে এমনভাবে আর কাউকে যেন প্রাণ দিতে না হয় সেই দাবি জানিয়েছেন নিহতের বাবা মো. সিরাজ ও মা নাজমা বেগম।

 


নিহতের বাড়িতে শুক্রবার, ১ মার্চ দুপুরে গিয়ে শোক জানান উত্তর দিঘলদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনসুর আলম। তিনি জানান, নয়নের সঙ্গে থাকা নাগরিকত্ব সনদ থেকে নম্বর নিয়ে রমনা থানা পুলিশ তাকে বিষয়টি জানান। পরে বিষয়টি পরিবারকে জানান তিনি। নিহতের পরিবারের জন্য সরকারি সহযোগিতার দাবিও জানিয়েছেন তিনি। সিরাজ-নাজমা দম্পতির ৬ সন্তানের মধ্যে নয়ন সবার ছোট। নয়নের আরও ৪ ভাই ও এক বোন আছে। রাত ১১টায় নামাজে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়। 

 


দৌলতখানের নিহত ২ বোন হলেন দোলা ও মাহিয়া। তাদের গ্রামের বাড়ি দৌলতখান উপজেলার গুপ্তগঞ্জ বাজার এলাকায়। তারা ওই এলাকার মৃত মফিজ মেম্বারের নাতনী। নিহতদের বাবার নাম কবির খান জুয়েল। তিনি দুদকে কর্মরত রয়েছেন। তারা ঢাকার এজিভি কলোনিতে বসবাস করেন। আরো জানা গেছে, নিহত দোলা একজন ব্যাংকার এবং তার ছোট বোন মাহিয়া  অনার্সে পড়েন।  তাদের মায়ের নাম মুক্তা বেগম। তাদেরকে ঢাকাতেই দাফন করা হয়েছে, এমনটাই জানিয়েছেন নিহতদের স্বজন সাংবাদিক মো. গজনবী। 


 


মন্তব্য লিখুন


Ish Brand

সর্বশেষ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাহীনা আজমীন ।। স্বত্ব © বরিশাল নিউজ ২০২৫

Developed By NextBarisal