Advertise top
মুক্তিযুদ্ধ

‘আমি এত বড় পদক পাব কল্পনা করিনি’

বরিশাল নিউজ ডেস্ক

প্রকাশ : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৬:০৭ পিএম     আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:০৯ পিএম

‘আমি এত বড় পদক পাব কল্পনা করিনি’
প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে একুশে পদক ২০২৪ নিচ্ছেন জিয়াউল হক।

দই বিক্রি করে যার চাল কেনা ও বাজার করার টাকা জোগাড় করতে হয়, সেই দইওয়ালা পেয়েছেন সমাজসেবা ক্যাটাগরিতে একুশে পদক ২০২৪।

 

এই দইওয়ালা জিয়াউল হকের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার মুসরিভূজা বটতলা গ্রামে।

 

সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একুশে পদকপ্রাপ্তির ঘোষণা দেয়।

 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মঙ্গলবার রাত থেকেই খবরটি ছড়াতে থাকে। মো.জিয়াউল হক একুশে পদকের জন্য মনোনীত হওয়ায় গ্রামের মানুষ, আত্মীয়স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীদের মধ্যে আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে।পরদিন বুধবার সকাল থেকে শুভাকাঙ্ক্ষীরা তার বাড়িতে ভিড় করেন, অভিনন্দন জানাতে সঙ্গে নিয়ে আসেন ফুলের তোড়া। 

 

কিন্তু বাড়িতে গিয়ে তার দেখা পাওয়া গেল না। জানা গেল, জিয়াউল হক পাশের গোমস্তাপুর উপজেলা সদর রহনপুর স্টেশন বাজারে দই বিক্রি করতে গেছেন। বাড়িতে তখন শুভাকাঙ্ক্ষীদের ভিড়। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রহনপুর স্টেশন বাজারে গিয়ে দেখা যায়, একটি ওষুধের দোকানের সামনে বসে দই বিক্রিতে ব্যস্ত  ৯০ বছর বয়সের জিয়াউল হক।

 

এ সময় জিয়াউল হক বলেন,‘বাড়িতে চাল ও বাজার করার টাকা ছিল না, তাই দই ও ক্ষীর নিয়ে আমি সকাল ৭টায় বের হয়েছি।’

 

তাঁর পদকপ্রাপ্তির খবর শুনে বললেন,“আমি কল্পনা করতে পারিনি যে, আমি এত বড় একটা পদক পাওয়ার জন্য মনোনীত হব। জীবনের শেষ দিকে এসে কাজের স্বীকৃতি পেলাম। এখন মরেও শান্তি পাব। কী যে আনন্দ পেয়েছি, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।”

 

জিয়াউল হক জানান, ১৯৫৫ সালে তিনি পঞ্চম শ্রেণি পাস করে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হতে চান। কিন্তু বাড়ি বাড়ি গরুর দুধ দহন করে জীবিকা নির্বাহ করা বাবা বই কেনার জন্য দেড় টাকা দিতে পারেননি।তাই উচ্চবিদ্যালয়েও ভর্তি হওয়া হয়ে ওঠেনি তাঁর। এর পর বাবার সংগ্রহ করা দুধ দিয়ে দই তৈরি করে ফেরি করে বিক্রি করা শুরু করেন। দু–তিন বছর পর কিছু টাকা জমা হয় জিয়াউল হকের হাতে।

 

তখন জিয়াউল হকের চিন্তা হয়, যারা তার মতো টাকার অভাবে বই কিনতে না পেরে লেখাপড়া থেকে ছিটকে পড়তে পারে, তাদের তিনি এই টাকা দিয়ে বই কিনে দেবেন। তবেই তার বিদ্যালয়ে পড়তে না পারার বেদনা লাঘব হবে। এই ধারনা নিয়েই গরিব ছাত্রদের মধ্যে বই বিলি শুরু করেন জিয়াউল হক। যত দিন পর্যন্ত সরকার বই বিনামূল্যে দেওয়া শুরু করেনি, ততদিন পর্যন্ত বই দিতে থাকেন। 

 

এর পর উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক শ্রেণির ছাত্রদের বই দিতে থাকেন জিয়াউল। তাঁর দেওয়া বই পড়ে ও আর্থিক সহায়তা পেয়ে অনেকেই স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে চাকরি করছেন। শুধু তা–ই নয়, দই বিক্রি করা টাকায় বইয়ের ভাণ্ডার গড়ে তোলেন তিনি।

 

১৯৬৯ সালে নিজের বাড়ির একটি ঘরে প্রতিষ্ঠা করেন ‘জিয়াউল হক সাধারণ পাঠাগার’। এ পাঠাগারে এখন ১৪ হাজার বই আছে বলে জানান জিয়াউল হক।

 

পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি গল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধের বইও আছে পাঠাগারে। সব বই রাখার স্থান না হওয়ায় সেই বইগুলো আছে পাশের মুসরিভূজা ইউসুফ আলী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজসহ আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠাগারে।

 

মহান ভাষা আন্দোলনের শহিদদের স্মরণে বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৬ সাল থেকে প্রতিবছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এই পুরস্কার দিয়ে আসছে। পুরস্কার হিসেবে প্রত্যেককে একটি স্বর্ণপদক, এককালীন অর্থ (চেক) ও একটি সম্মাননাপত্র দেওয়া হয়।


মন্তব্য লিখুন


সম্পাদক ও প্রকাশক: শাহীনা আজমীন ।। স্বত্ব © বরিশাল নিউজ ২০২৪

Developed By NextBarisal