বরিশাল নিউজ ডেস্ক
প্রকাশ : ৩০ জুলাই ২০২৪, ০৬:৩৭ পিএম
সংগীতশিল্পী হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল। বরিশালের মুলাদী উপজেলায় তার গ্রামের বাড়ী। মা-বাবার অনুপ্রেরণাতেই গানের জগতে এসেছিলেন । বরিশাল রেডক্রিসেন্টর সাথে জড়িত জুয়েল সামাজিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিলেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গাইতেন গান। বরিশালে জুয়েল তখন সবার কাছে পরিচিত ছিলেন শহীদ আলতাফ মাহমুদের ভাতিজা হিসেবে।
সম্ভাবনাময় জুয়েলকে নিয়ে ১৯৮৬ সালে ঢাকা থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক পত্রিকা’ নামের একটি সংবাদপত্রে প্রথম ফিচার প্রকাশিত হয়। সে বছরই জুয়েল বরিশাল ছেড়ে ঢাকা চলে যান। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি–কেন্দ্রিক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক তৎপরতায় জড়িয়ে পড়েন। ব্যান্ড সংগীত যখন তুমুল আলোচনায়, ঠিক তখনই ব্যতিক্রমী সেই কণ্ঠ নিয়ে মিডিয়ায় হাজির হন হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল।
জুয়েলকে উদ্ধৃত করে ইত্তেফাক লিখেছে, “আমি ঢাকার বাইরে বরিশাল থাকতাম। কখনো ভাবিনি আমার গান রেকর্ড হবে, অ্যালবাম বের হবে। ১৯৮৬ সাল থেকে আমি যখন ঢাকায় থাকতে শুরু করি, আমার বন্ধু আবৃত্তিকার শিমুল মোস্তফা প্রথম বলে, “তোর একটা অ্যালবাম বের করা উচিত। আমি বললাম, আমাকে আর কে ডাকবে! তখন ও বলল, একজন ভদ্রলোক আছেন, আজিজুর রহমান কচি, তার কাছে তোকে নিয়ে যাব। উনি তোর গান শুনলেই রাজি হবেন। তখন বললাম, অ্যালবাম করলে একজনের কাছেই যেতে হবে, সেটা আইয়ুব বাচ্চু।”
পরে এক বন্ধুর সূত্রে এক দুপুরে আইয়ুব বাচ্চুর বাসায় হাজির হলে বাচ্চু ভাই একটা গিটার তুলে বললেন, গাও।’
অ্যালবাম বের করার আগে গান নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন জুয়েল। তিনি যখন কলেজে পড়েন, তখন তপন চৌধুরীর একটা অ্যালবাম বের হয়, যেটির সংগীত পরিচালক ছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। কলেজ থেকে ফেরার পর জুয়েল অ্যালবামটি জোরে জোরে ছাড়তেন, আর বিরহকাতর হয়ে যেতেন।
১৯৯৩ সালে আইয়ুব বাচ্চুর সুরে প্রথম অ্যালবাম ‘কুয়াশা প্রহর’ দিয়ে বাজিমাত করেন জুয়েল। এরপর একে একে প্রকাশিত হয় ‘এক বিকেলে’ (১৯৯৪), ‘আমার আছে অন্ধকার’ (১৯৯৫), ‘একটা মানুষ’ (১৯৯৬), ‘দেখা হবে না’ (১৯৯৭), ‘বেশি কিছু নয়’ (১৯৯৮), ‘বেদনা শুধুই বেদনা’ (১৯৯৯), ‘ফিরতি পথে’ (২০০৩), ‘দরজা খোলা বাড়ি’ (২০০৯) এবং ‘এমন কেন হলো’ (২০১৭)। এছাড়াও বেশ কিছু সিঙ্গেল ও মিশ্র অ্যালবামে গেয়েছেন জুয়েল।
২০১১ সালে তার লিভার ক্যানসার ধরা পড়ে। এরপর ফুসফুস এবং হাড়েও সেটি ক্রমশ সংক্রমিত হয়। দেশ ও বিদেশের চিকিৎসা সহযোগিতায় ক্যানসারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে গেছেন। মনের জোর হারাননি। গেয়ে গেছেন গান এবং করে গেছেন বিভিন্ন অনুষ্ঠান। গায়কের বাইরেও তিনি ছিলেন একজন টেলিভিশন অনুষ্ঠান ও তথ্যচিত্র নির্মাতা। এর পাশাপাশি অনুষ্ঠান সঞ্চালনাও করতেন।
কিছুদিন আগেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হলে আর ফিরে আসেননি তিনি। মঙ্গলবার বেলা ১১টা ৫৩ মিনিটে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
সম্পাদক ও প্রকাশক: শাহীনা আজমীন ।। স্বত্ব © বরিশাল নিউজ ২০২৪
Developed By NextBarisal
মন্তব্য লিখুন