November 24, 2022

যশোরে নৌকায় ভোট চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিয়ে দেশ সেবা করার সুযোগ চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় উপস্থিত জনতা দু’হাত তুলে সমস্বরে নৌকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

যশোরের সবকটি আসন থেকে আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করায় যশোরের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।

যশোরের শামস-উল-হুদা স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করার সময় প্রধানমন্ত্রী নৌকায় ভোট চান।

সমাবেশ উপলক্ষে বৃহত্তর য‌শোরসহ আশপা‌শের জেলাগু‌লো‌ থেকে হাজার হাজার মানুষ সেখানে ছুটে আসে। দুপুর ১২টার আগেই শামস্-উল হুদা স্টেডিয়াম কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।

প্রায় পাঁচ বছর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হা‌সিনার য‌শোর আসা‌কে কেন্দ্র ক‌রে পু‌রো সমা‌বেশস্থল উৎস‌বে রূপ নেয়। রং-বের‌ঙের পোশাক, ক‌্যাপ, গে‌ঞ্জি প‌রে ব‌্যান্ডপা‌র্টি তা‌লে তা‌লে মি‌ছিল নি‌য়ে প্রবেশ করে স্টে‌ডিয়া‌মে।

যশোরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে ভবিষ্যতে বেশকিছু উন্নয়ন পরিকল্পনার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।

যশোরে কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য একটি প্রকল্প শেষ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এবার আমরা দ্বিতীয় প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এর ফলে যশোর-খুলনা-সাতক্ষীরার জলাবদ্ধতা দূর হবে। ৮২ কিলোমিটার নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে কাজ হাতে নিয়েছি। কপোতাক্ষের মতো ভবদহের জলাবদ্ধতা না থাকে সেই বিষয়েও আমরা পদক্ষেপ নেবো।

ভাঙা-যশোর-বেনাপোল, খুলনা-যশোর-কুষ্টিয়া, যশোর-খুলনা-মংলা-রাস্তাগুলো সব জাতীয় সড়কে উন্নীত করে দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, পদ্মা সেতু থেকে যেন যশোরে সরাসরি আসতে পারে। ভাঙা-যশোর রাস্তাও মহাসড়কে উন্নীত হবে।

ঢাকা থেকে যশোর রেল সংযোগের কাজের কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ২০১০ সালে যশোরে একটি মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ৫’শ শয্যাবিশিষ্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণের প্রাথমিক কাজ এখন চলমান আছে। এটা আমরা নির্মাণ করে দিচ্ছি আপনাদের চিকিৎসাসেবা যাতে ভালো হয়। প্রত্যেকটি উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৩১ বেডের ছিল, আমরা তা ৫০ বেডে উন্নীত করে দিয়েছি।

এসময় যশোর স্টেডিয়ামকে উন্নত করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, প্রত্যেকটি উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম করে দিচ্ছি। খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চা করতে হবে। মাদক থেকে দূরে থাকতে হবে। এটা মানুষের জীবন ধ্বংস করে দেয়। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসে লিপ্ত হওয়া যাবে না। এদেশকে গড়ে তুলতে যুবকদের কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। 

যশোরে উন্নয়নের কর্মকাণ্ড তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ইউনিয়ন পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। এই যশোর থেকে আমরা যাত্রা শুরু করেছিলাম। এখানে নির্মাণ হয়েছে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, আইটি পার্ক, যেখানে দেড় থেকে দুই হাজার কর্মসংস্থান হয়েছে। যেখানে বিদেশ থেকে অনেক বিনিয়োগ আসছে।

‘যশোরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছিলাম। খালেদা জিয়া এসে অনেকগুলো বন্ধ করে দেয়। আমরা সেই বিশ্ববিদ্যালয় চালু করেছি। স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা সবগুলোর উন্নয়নে কাজ করেছি। স্বাক্ষরতার হার যেখানে বিএনপির সময়ে ৪৫ ভাগ ছিল, সেটিকে আমরা ৭৫ ভাগে উন্নীত করেছি।’

পদ্মা সেতু ও মধুমতি সেতু হওয়ায় এই অঞ্চলের মানুষের সাথে ঢাকা যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তনের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। 

এসময় তিনি যশোর বিমানবন্দরকে আরও আধুনিকায়ন করার জানিয়ে যশোর-চট্টগ্রাম নতুন রুট চালু করার কথা বলেন তিনি।

পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে মোংলা সমুদ্রবন্দরের কার্যকারিতার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এখন কিন্তু ঢাকা থেকে অনেক মাল চট্টগ্রামে যায় না, মোংলা বন্দরে যায়। এটা কিন্তু ক্ষমতায় এসে খালেদা জিয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। আমরা এসে সেটা আবার চালু করেছি।

অভয়নগরে ইপিজেড করার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে জমি নেওয়া হয়ে গেছে। ৫’শ একর জমি আমরা নিয়েছি। সেখানে ৪’শটা শিল্প প্লট হবে। বহু লোকের কর্মসংস্থান হবে। এখানে যে স্থলবন্দর, যেহেতু এখানে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে আমাদের যুব সমাজের কর্মসংস্থান হবে।

যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদারর।

জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পীযুষ ভট্টাচার্য, আবদুর রহমান, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় সদস্য আমিরুল আলম মিলন, ইকবাল হোসেন অপু, পারভিন জামান কল্পনা, গ্লোরিয়া সরকার ঝর্ণা।

এ ছাড়া কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান, নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন খান নিলু, সংসদ সদস্য শেখ সারহান নাসের তন্ময়, শেখ আফিল উদ্দিন, কাজী নাবিল আহমেদ, নাসির উদ্দিন, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

বরিশালনিউজ/ ডেস্ক নিউজ